ধরা পড়ছে না ইলিশ

নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না—এমন অভিযোগ জেলে ও বিক্রেতাদের। মা ইলিশ রক্ষা ও স্বাচ্ছন্দ্যে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। কিন্তু এরপরও নদীতে পাওয়া যাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ।

ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে তাজা ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। যেগুলো আসছে সেগুলো হিমায়িত। মাছের রঙ দেখেই বোঝা যায় এগুলো অনেক পুরনো। ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে নিষেধাজ্ঞা ওঠার পরই এগুলো বাজারে এনেছেন ব্যবসায়ীরা।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, নদীতেই এখন ইলিশ নেই। ডিম ছাড়ার জন্য যেসব মাছ সাগর থেকে নদীতে এসেছিল সেগুলো ডিম ছেড়ে এরমধ্যে আবার সাগরে ফিরে গেছে। নদীতে ইলিশ থাকার জন্য যে পরিবেশ বা যে গভীরতা দরকার, সেটা নেই।

দেশে ইলিশের সমাগম বেশি ঘটে মেঘনা ও পদ্মায়। এ দুটি নদীকে ঘিরে আশপাশের বিভিন্ন মোহনায় আসে ইলিশ। ভোলার তেতুলিয়া নদী, বরগুনা, পাথরঘাটা ও রাঙাবালীর আগুনমুখা নদীতেও যায় ইলিশ।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ইলিশের বড় শত্রু নদীভাঙন ও বন্যা। এ দুই কারণে পদ্মা, মেঘনা, তেতুলিয়া, আগুনমুখায় অসংখ্য চর তৈরি হচ্ছে। কমছে নদীর গভীরতা। গভীরতা কমলে প্রবাহ কমে যায়। এতে ইলিশের বিচরণ বাধাগ্রস্ত হয়।

অতি বন্যার কারণেও নদীতে পলি বেড়ে গভীরতা ও পানির স্রোত কমছে। এ ছাড়া নদীগুলোয় ডুবোচরের কারণে ইলিশের বিচরণে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

এখন নদীতে আগের চেয়ে দূষণও বেড়েছে। গত বছরের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় উত্তরের জনপদ থেকে নানা ধরনের বর্জ্য, কৃষিজমির কীটনাশক নদীতে পড়েছে। যাতে নষ্ট হচ্ছে স্বাভাবিক পরিবেশ। এসব কারণে পদ্মা-মেঘনায় কমলেও সাগরে ইলিশ বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

চাঁদপুরের ইলিশ ব্যবসায়ী মোকাররম হোসেন জানিয়েছেন, স্থানীয় নদীর ইলিশ সরবরাহ না থাকলেও ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া থেকে দিনে ১ হাজার থেকে ১২০০ মণ ইলিশ আসছে চাঁদপুরের বড়স্টেশন মাছ ঘাটে।

শরীয়তপুরেও পদ্মা-মেঘনায় কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও জেলেরা জাল নিয়ে যাচ্ছেন নদীতে। তারা বলছেন, ইলিশের ভরা মৌসুম চললেও ধরা পড়ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা অনেকটাই হতাশ।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ডসহ জেলা উপজেলা প্রশাসন। প্রতিবছরই নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত জাটকা (৯ ইঞ্চির ছোট ইলিশ) শিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটবে না। ছোট ইলিশ বেড়ে ওঠার জন্য ইলিশের অভয়াশ্রমে সব ধরনের জাল ফেলা নিষেধ থাকে মার্চ ও এপ্রিলে। এবারও নিষেধাজ্ঞা ছিল। মা ইলিশকে নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে অক্টোবরের ২২ দিন নদীতে সব ধরনের মাছ শিকার বন্ধ রাখে সরকার। এ কারণে বছর শেষে ইলিশের মোট আহরণ ৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে আশা করছেন মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মিহির কান্তি বিশ্বাস জানিয়েছেন, ইলিশের অভয়াশ্রম গড়ে তোলার মাধ্যমে নিরাপদ বিচরণস্থল তৈরির চেষ্টা করছে সরকার। তাতে শেষ রক্ষা হবে বলে মনে হয় না। ইলিশের উৎপাদন বাড়লেও সেগুলো সাগরের। নদীর ইলিশ কমছে। বন্যায় পলি পড়ে নদী ভরাট হচ্ছে। ডুবোচর বাড়ছে। এতে কমছে পানির প্রবাহ। সঙ্গে দূষণ তো আছেই। এ কারণেই ইলিশের আনাগোনা কম।

জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, ‘ইলিশের উৎপাদন প্রতিবছরই বাড়ছে। মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নৌবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে কোস্টগার্ড, জেলা-উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। এর সুফল পাবো। মাছ ধরা যখন নিষিদ্ধ, তখন তালিকাভুক্ত সহস্রাধিক জেলেকে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তাও দেওয়া হয়েছে।’