সুপারশপে বিক্রি হওয়া পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির দায় কার?

দেশের সুপারশপগুলো প্রতিদিন দেড় শতাধিকেরও বেশি পণ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ ছাড় দিয়ে বিক্রি করছে। তারপরও দেশের সুপারশপগুলোয় সাধারণ বাজারের তুলনায় পণ্যের দাম বেশি—এমন অভিযোগ অসত্য বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দেশের মোট বাজারের সর্বোচ্চ ২ শতাংশ অবদান রাখছে সুপারশপগুলো। সেখানে দেশের মোট বাজারের পণ্যমূল্যের ওপর সুপারশপগুলো কোনওভাবেই প্রভাব বিস্তার করে না। এ ছাড়া সুপারশপগুলো উৎপাদকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে প্যাকেটজাত পণ্যের দাম নির্ধারণ করে—এমন অভিযোগও শতভাগ ভিত্তিহীন। উৎপাদকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করার সক্ষমতা সুপারশপগুলোর নেই বলেও জানিয়েছেন তারা।

সুপারশপ কর্তৃপক্ষ বলছে, সাধারণ বাজারের তুলনায় সুপারশপে মূল্য বেশি—এমন অভিযোগ ঠিক নয়। সাধারণ বাজারের পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সুপারশপের পণ্যের মান নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। সুপারশপগুলো সব সময়ই পণ্য ও সেবার মান নিশ্চিত করে।

দেশের বিভিন্ন সুপারশপে বিক্রি হওয়া পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক বাজারের তুলনায় বেশি এমন অভিযোগ করেছে সরকারি নীতি নির্ধারণী কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক শফিকুজ্জামানের এমনটাই মত। শুধু তা-ই নয়, উৎপাদনকারীর সঙ্গে যোগসাজশ করে নানা জাতের চালের প্যাকেটের গায়ে সুপারশপগুলো বাজারের তুলনায় বেশি দাম নির্ধারণ করে এমআরপি (সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য) লিখে এনে বিক্রি করে—এমন অভিযোগও করা হয়েছে।

তদের দাবি, দেশে মিনিকেট নামে কোনও ধানের জাত না থাকলেও দেশের সুপারশপগুলো এই নামে চাল প্যাকেটজাত করে বিক্রি করছে। তবে সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশের বিভিন্ন সুপারশপ কর্তৃপক্ষ।

বিষয়গুলো সরকারের নজরে আনতে বাংলাদেশ সুপারশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে।     

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুপারশপ স্বপ্নর নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির জানিয়েছেন, সুপারশপগুলো প্রতিদিন ১৫০টিরও বেশি পণ্যে ১০ শতাংশ ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করছে। ফলে ক্রেতারা কাঁচাবাজারের তুলনায় কম দামে সুপারশপ থেকে পণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছে। একইসঙ্গে তিনি জানান, উৎপাদকদের প্রভাবিত করার মতো শক্তি বা ক্ষমতা দেশের সুপারশপগুলোর নেই। কারণ তাদের পণ্য বিক্রির পরিমাণ বাজারে প্রভাব ফেলার মতো নয়। দেশের মোট বাজারের ২ শতাংশ মার্কেট শেয়ার রয়েছে সুপারশপগুলোর। এই শেয়ার নিয়ে মোট বাজারের পণ্যের মূল্যে প্রভাব ফেলা সম্ভব নয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মিনা বাজারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিইও শাহীন খান জানিয়েছেন, সুপারশপগুলোয় বিক্রি হওয়া পণ্যের মান নিয়ে কোনও প্রশ্নের সুযোগ নাই। দেশি ডাল মানে দেশি ডাল। নদীর মাছ মানে নদীর মাছ। দেশির সঙ্গে বিদেশি বা নদীর সঙ্গে সাগর মিশিয়ে পণ্য বিক্রি করার প্রশ্নই ওঠে না। কাজেই সুপারশপগুলো দেশি ডালের দামই রাখবে। নদীর মাছের দামই রাখবে। তাই পণ্য ও তার মূল্য নিয়ে সুপারশপগুলো ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করে না।

তিনি বলেন, মিনিকেট নামে হাজার হাজার বস্তা চাল বিক্রি হচ্ছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। এটি আমাদের দেওয়া নাম নয়। সরকার যদি কাল এই চালের নাম পরিবর্তন করে অন্য নাম দেয়, তাহলে আমরা অন্য নামেই বিক্রি করবো। কোনও আপত্তি নাই। একইভাবে চালের উৎপাদক কোম্পানিগুলোকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা আমাদের নাই। কাজেই তাদের প্রভাবিত করে এমআরপি নির্ধারণ করার প্রশ্নই ওঠে না।

শাহীন খান বলেন, প্রতিযোগিতার এই বাজারে আমরা অনেক স্থানেই ভ্যাট ক্রেতাদের কাছ থেকে আদায় না করে নিজেরাই দিয়ে দিচ্ছি। এতে মুনাফা হারাচ্ছে সুপারশপগুলো। ধানমন্ডি বা গুলশানের ক্রেতা আর শনির আখড়ার ক্রেতা তো এক নয়। এভাবেই ব্যবসা পরিচালনা করছে সুপারশপগুলো।