২০৩৯ সালের মধ্যে জিডিপি চার শতাংশের নিচে নামার আশঙ্কা বিশ্বব্যাংকের

বাংলাদেশের বিভিন্ন খাত নতুন করে সংস্কার না হলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি  চার শতাংশের নিচে নেমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক। তারা বলছে, ২০৩৫ থেকে ২০৩৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জিডিপি এমন অঙ্কে নেমে যেতে পারে। বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানী ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘চেঞ্জ অব ফেব্রিক’ শীর্ষক প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক দশক ধরে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি সেরা প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর একটি হলো বাংলাদেশ। কিন্তু এতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কারণ নেই। অর্থনীতির তেজিভাব কখনো স্থায়ী প্রবণতা নয়। দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি সব সময় উচ্চঝুঁকিতে থাকে। তবে কয়েকটি দেশ দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। শীর্ষ ১০-এ থাকা দেশগুলোর মাত্র এক-তৃতীয়াংশ দেশ পরের দশকেও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। গত এক দশকে (২০১০-১৯) যেসব দেশ শীর্ষ ১০-এ ছিল, সেসব দেশ আগের দশকে এ স্থানে ছিল না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের শীর্ষ প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর মতো বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধির কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির জন্য তিনটি বাধা চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক। এগুলো হলো- বাণিজ্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস, দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক খাত এবং ভারসাম্যহীন ও অপর্যাপ্ত নগরায়ন। এই তিন বাধা দূর করতে পারলে উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে এবং ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধিও টেকসই হবে। এছাড়া ২০৩১ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের নিচে নেমে এলে সরকারের লক্ষ্য পূরণে অতিরিক্ত দুই বছর সময় প্রয়োজন হবে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বিশ্বব্যাংকের সুপারিশে বলা হয়, রফতানিতে প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে রফতানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশের শুল্ক-করহার অন্য দেশের তুলনায় বেশি, যে কারণে বাণিজ্য সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।  বিশ্বব্যাংক বলেছে, ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংক খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। কিন্তু দেশের আর্থিক খাত অতটা গভীর নয়। গত চার দশকে আর্থিক খাতের উন্নতি হলেও এখনো তা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া আধুনিক নগরায়নই বাংলাদেশের পরবর্তী ধাপের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভারসাম্যপূর্ণ আধুনিক নগরায়নের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ডানডান চেন। বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ নোরা ডিহেল এবং প্রধান অর্থনৈতিক বিশ্লেষক জাহিদ হুসাইন, সানেমের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অধ্যাপক সেলিম রায়হান, এসবিকে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া বাশার, বিশ্ব ব্যাংকের সাউথ এশিয়া জোনের প্র্যাকটিস ম্যানেজার হোন এস সোহ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক আমাদের  যেসব প্রস্তাবনা দিয়েছে আমরা এই প্রস্তাবগুলো দেখবো; তারপর সেখান থেকে পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা নেবো।