পাকিস্তানকে কতটা পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ?

১৯৭১ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের বাজেট ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। সেই বাজেট আজ  পরিণত হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকায়। সেদিনের ১২৯ ডলার মাথাপিছু আয়ের দেশটিতে আজ মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮১৪ মার্কিন ডলার। সময় পেরিয়েছে, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এগিয়েছে।

বাংলাদেশকে যাত্রার শুরুতে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলা হলেও এখন সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রায় সব সূচকেই পাকিস্তানকে টপকে গেছে বাংলাদেশ।

মাথাপিছু আয়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি, বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং সম্পদ উৎপাদন ও আহরণ দৃশ্যমানভাবে বেড়েছে।

স্বাধীনতার পর প্রায় শূন্য থেকে শুরু করলেও ৫০ বছরে এসে দারিদ্র্য আর দুর্যোগের সেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পথে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ।

বিশেষ করে চলমান বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ভালো।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ এখন অনেক দেশের কাছে অনুকরণীয় হয়ে আছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী— মাথাপিছু আয়, রফতানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। এখন থেকে পাঁচ বছর আগে মাথাপিছু আয়ে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রফতানি আয় পাকিস্তানের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পৌনে ছয়গুণ বেশি। আর পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতি যেখানে ২৭ শতাংশ, বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি সেখানে পৌনে ৯ শতাংশের ঘরে।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় সাফল্য অহংকার করার মতো। এই অগ্রগতির জন্য পাকিস্তান এখন ঈর্ষা করে বাংলাদেশকে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করা ঠিক হবে না। আমরা এখন তুলনা করতে পারি উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে।’ তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বলতে পারি— বাংলাদেশের বিস্ময়কর পরিবর্তন হয়েছে।’ আতিউর রহমান মনে করেন, এত বড় উত্তরণ সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্বের ফলে। তবে ’৭৫-এ তাঁকে না হারালে দেশ আরও এগিয়ে যেতো। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার ফলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আবারও এগিয়েছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৫৮০ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয়কে ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। ওই অর্থবছরে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় হয় ১ হাজার ৪৫৯ ডলার। একই অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৫১ ডলার। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৯৩ ডলার। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে প্রায় ৩০ গুণ।

অপরদিকে পাকিস্তান ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের (পিবিএস) তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশটির মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় ১ হাজার ৫৪৩ ডলার।

এদিকে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেকর্ড পরিমাণ ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা রফতানি করলেও পাকিস্তান গত অর্থবছরে ৩ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। অর্থাৎ পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের রফতানি আয় এখন ৬০ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশে।

অপরদিকে ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ২৭ শতাংশ। দেশটির গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি ৩৫ শতাংশ, শহরে ২৩ শতাংশের মতো ও গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রায় ৪৭ শতাংশ।

গত ফেব্রুয়ারির শেষে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৫৪৫ কোটি ডলারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে, আমাদের রিজার্ভের পরিমাণ ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলার।

এক ডলার কিনতে  বাংলাদেশকে ১০৬ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আর পাকিস্তানে ডলারের দাম ২৫৯ রুপি। ২০২১-২২ অর্থবছরে পাকিস্তানের প্রবাসী আয় এসেছে ৩ হাজার ১২০ কোটি ডলার। আর বাংলাদেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার।