পেঁয়াজের বাজার অস্থির করছে কারা?

দেশের বাজারে সুযোগ পেলেই অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ নিয়ে খেলে। এই খেলায় বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে। এই অজুহাতে দাম বাড়ে। বাজারে সৃষ্টি হয় অস্থিরতা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন দেশের মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এসব ব্যবসায়ী অনৈতিক মুনাফার লোভে এ কাজ করে।  

বাজার ঘুরে জানা গেছে, মাত্র দুই তিন দিনের ব্যবধানে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজে মানভেদে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা এই দাম বৃদ্ধির কোনও কারণ জানাতে পারছেন না। পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, সরবরাহ কম, চাহিদার সঙ্গে সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকলে দাম তো বাড়বেই।

অপরদিকে আমদানিকারকরা বলছেন, যে দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয় সে দেশের সরকার, বিশেষ করে ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে শুল্ক আরোপ করেছে, তাই দাম বাড়বে, যা খুবই স্বাভাবিক।    

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত সরকারের পেঁয়াজ রফতানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণায় দেশের বাজারে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে, তাতেই প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। যদিও খুচরা বাজারে এখনও শুল্ক আরোপ করা পেঁয়াজ আসেনি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন।

অপরদিকে বাংলা ট্রিবিউনের হিলি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি বেড়েছে। এতে দেশের বাজারে সরবরাহ বাড়ায় সেখানে দাম কমতির দিকে রয়েছে। সম্প্রতি ভারত সরকারের শুল্ক আরোপ করার পর দাম বেশি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকাররা। তবে আমদানি অব্যাহত থাকলে দাম খুব একটা বাড়বে না বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা।

প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সোমবার (২২ আগস্ট) বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি বাড়ায় ইন্দোর জাতের পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আর নাসিক জাতের পেঁয়াজ ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আজ নতুন পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় দাম কমে এসেছে। বর্তমানে ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ ৪৮ থেকে ৫০ আর নাসিক জাতের পেঁয়াজ ৫৩ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক শাহিনুর রেজা বলেন, বন্যার কারণে ভারতেই পেঁয়াজের উৎপাদন কমায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যে কারণে তাদের সরকার সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং পেঁয়াজ রফতানি নিরুৎসাহিত করতে গত শনিবার রাতে রফতানির ওপর ৪০ ভাগ শুল্ক আরোপ করে। কিন্তু কেজিপ্রতি কত টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হবে, সেটি নির্ধারণ না হওয়ায় রবিবার বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি কমে যায়। এদিন বন্দর দিয়ে মাত্র সাত ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়, যা আগের টেন্ডারে ছিল।

হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানিয়েছেন, গত রবিবার বন্দর দিয়ে মাত্র সাতটি ট্রাকে ২১১ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। তবে পরের দিন সোমবার থেকে বন্দর দিয়ে নতুন শুল্কের পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। সোমবার বন্দর দিয়ে ৫৯টি ট্রাকে ১ হাজার ৭৯১ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। আজ (মঙ্গলবার) বিকাল ৩টা পর্যন্ত বন্দর দিয়ে ১৫ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

এদিকে দেশের অভ্যন্তরে বাজার অস্থির হয়ে ওঠায় দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ভারত ছাড়াও পৃথিবীর যেকোনও দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, ভারত তাদের পেঁয়াজ রফতানি নিরুৎসাহিত করার জন্য ৪০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। এটা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের বিকল্প হচ্ছে অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আনা। মিসর, তুরস্ক, চীন থেকে এটা আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী, বাণিজ্য সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।

তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যা সমাধানে আমাদের হাতে কিছু নেই। একটাই আছে, তা হলো অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হবে। এ ছাড়াও বাজার শক্তভাবে মনিটর করতে হবে, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। গ্রীষ্মকালীন আবাদ বৃদ্ধি এবং পেঁয়াজকে দীর্ঘ সময় পচন থেকে রক্ষা করতে হবে।

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানিয়েছে, গতকাল রাজধানীর বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যদিও বাস্তবে দাম বেড়েছে আরও বেশি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পেঁয়াজ আমদানিকারক মকবুল হোসেন জানিয়েছেন, ভারত সরকার শুল্ক বাড়িয়েছে বলেই দাম বেড়েছে। ৪০ শতাংশ শুল্কারোপ করায় প্রতি কেজিতে ১০ টাকার মতো দাম বাড়ে। তা-ই বেড়েছে, এর বেশি কিছু নয়।

কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান জানিয়েছেন, নতুন শুল্ক আরোপ করা পেঁয়াজ তো এখনও দেশে আসেনি। তাহলে দাম বাড়বে কেন? তিনি অভিযোগ করেন, গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর কাছে পেঁয়াজ জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা সুযোগ পেলেই দাম বাড়িয়ে দেয় পেঁয়াজের। এতে বাজার অস্থির হয়। মানুষের ভোগান্তি বাড়ে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আইপি পেলে যেকোনও দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। তবে বাজার কেউ অস্থির করলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।