মার্কিন দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর জন ফে

‘শর্ত পূরণ হলে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানিতে শুল্ক কমানো সম্ভব’

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে কটন বা তুলা আমদানি করলে তাতে কোনও ধরনের শুল্ক দিতে হয় না। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যেসব তৈরি পোশাক রফতানি করা হয়, সেখানে শুল্ক দিতে হয় ১৫ শতাংশ। এটি যৌক্তিক নয়। বাংলাদেশের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের এই অভিযোগের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর জন ফে বলেন, পণ্য রফতানিতে শুল্ক কমানো সম্ভব। তবে এ জন্য শ্রমিকের অধিকার ও কর্মপরিবেশসহ প্রয়োজনীয় শর্তগুলো মানতে হবে।

সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পল্টন টাওয়ারে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ’শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বিকেএমইএসহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান এবং শাশা ডেনিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন পিআরআইর রিসার্স ডিরেক্টর ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক এবং পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ। ইআরএফের সভাপতি রিফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

প্রসঙ্গত ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের জের ধরে ওই বছরের জুনের শেষ দিকে বাংলাদেশের জিএসপি (রফতানি অগ্রাধিকার খাত) সুবিধা বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র। আর সুবিধা ফিরে পেতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং শ্রমিক অধিকারসহ ১৬টি সংস্কারের শর্ত দেওয়া হয়। আর দেশটির দাবি এখনও বাংলাদেশে সব শর্ত পূরণ হয়নি।

ইআরএফের অনুষ্ঠানে জন ফে বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। তবে এই শুল্ক কমানো সম্ভব। এজন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পালন করতে হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, আইটি, কৃষি, খাদ্য ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ করছে। তবে এই বিনিয়োগ করতে গিয়ে বেশকিছু সমস্যা রয়েছে। তা সমাধান করতে হবে।

কমার্শিয়াল কাউন্সিলর আরও বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকখাত অনেক বিশাল। এখানে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলো কাজে লাগাতে উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন বাংলাদেশে সামষ্টিক অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিনিয়োগের জন্য এটিও সমস্যা।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ভিসানীতি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে জন ফে বলেন, আমি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু ভিসানীতির যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ব্যাখা দিয়েছে।

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমএইর প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকা থেকে (এলডিসিউত্তরণ) বের হয়ে যাচ্ছে। এলডিসি উত্তরণ হলেও,আরও ৬ বছর বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়ার বাজারে আমরা শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৯ সাল পর্যন্ত এ সুবিধা দিয়েছে। এসব দেশে আমরা শুল্ক ও কোটামুক্ত রফতানি করতে পারি। আগামী ৬ বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও শুল্কমুক্ত কোটা সুবিধা চাচ্ছি। পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সম্মেলন হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধার বিষয়ে যাতে মতামত দেয়, সে আহ্বান জানাচ্ছি।