‘কাজ নেই, মজুরি নেই’ নিয়মে যাচ্ছে গার্মেন্ট খাত

শ্রমিক অসন্তোষের কারণে যেদিন কারখানা বন্ধ থাকবে, সেদিন সাধারণ ছুটি হিসেবে বিবেচিত হবে। কাজ না থাকলে শ্রমিকরা মজুরিও পাবে না। গার্মেন্ট কারখানা মালিকরা এই পদ্ধতি চালুর দাবি তুলেছেন। এরইমধ্যে কিছু কারখানায় তা করা শুরুও করা হয়েছে। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এক আলোচনা সভায় এই তথ্য জানায়।

রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এতে এই খাতের প্রায় ২০০ মালিক উপস্থিত ছিলেন।

সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান জানান, শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা অনুযায়ী ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ বা—‘কাজ নেই, মজুরি নেই’ নিয়ম কার্যকর করতে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে মালিকদের  বলা হয়েছে। শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা অনুসারে, বেআইনি ধর্মঘটের কারণে কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকলে এবং সে রকম পরিস্থিতিতে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ রাখলে মালিকরা কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন এবং এই সময়ে শ্রমিকদের মজুরি দিতে হবে না।

পোশাক শিল্প নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলেও মনে করেন কারখানার মালিকরা। তারা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কারখানা খোলা রাখা যাচ্ছে না। আবার বন্ধ রাখলেও আক্রান্ত হতে হচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশি-বিদেশি একটি চক্র এই সময়ের সুযোগ নিতে চাইছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে বাঙচুর চালান আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকরা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, পাঁচ বছর পর পর মজুরি বোর্ডের সভা বসে। কিন্তু নির্বাচনের আগে হওয়ায় দেশি-বিদেশি একটি চক্র এই সময়ের সুযোগ নিতে চাইছে; অনেক ষড়যন্ত্র ভর করেছে এই খাতে। চলমান সংকটের কারণে অনেক পোশাকমালিক হয়তো আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাবেন।

বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহসভাপতি এস এম মান্নান বলেন, যারা মারামারি করছেন, কারখানা জ্বালিয়ে দিচ্ছেন, তারা সবাই বহিরাগত। যারা দেশের অগ্রগতি চান না, তারা এসব কাজ করছেন।

বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কারখানা খোলা রাখা যাচ্ছে না, আবার বন্ধ রাখলেও আক্রান্ত হতে হচ্ছে। তিনি সরকারের কাছে কারখানার নিরাপত্তা দাবি করেন।

আলোচনা সভায় বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, শ্রম আইন অনুসারে এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের মজুরি ও বাৎসরিক মজুরি বাড়ানো (ইনক্রিমেন্ট) হচ্ছে। নতুন মজুরি নির্ধারিত হলে সেটিও মানা হবে। আমরা জানিয়েছি, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকেই নতুন কাঠামোয় মজুরি দেওয়া হবে। ফলে সেই সময়ের আগেই এ ধরনের আন্দোলন, সহিংসতা ও ভাঙচুর অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ফারুক হাসান আরও বলেন, গত কয়েক দিনে আমরা শতাধিক শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সবাই জানিয়েছে, ভাঙচুরের সঙ্গে তারা জড়িত নয়। তাহলে এগুলো করছে কারা?

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক প্রচারণা চালিয়ে ভাঙচুর চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। ফারুক হাসান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশ ও শিল্পের স্বার্থে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা প্রয়োগ করবেন পোশাকমালিকেরা। আজ থেকে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় এ নিয়ম কার্যকর হয়েছে। আগামীকালও এটি চালু থাকবে এবং পরবর্তীকালে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে।

আলোচনা সভায় হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ বলেন, কারখানা ভাঙচুর হলে বা শ্রমিকেরা কাজে না গেলে ১৩(১) ধারা বাস্তবায়নে সবাইকে একমত হতে হবে। এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হবে, সবাই তা মানবে। এ ছাড়া শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় এলাকাভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে এলাকায় সমস্যা হবে, সেখানে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি জানান, আশুলিয়ায় হা-মীমের চারটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এই অস্থির সময়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন।

বিজিএমইএ সহসভাপতি আরশাদ জামাল বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে যেসব দিনে কারখানা বন্ধ থাকবে, সেই দিনগুলো সাধারণ ছুটি হিসেবে বিবেচিত হবে এবং কাজ না থাকলে মজুরিও থাকবে না। এ বিষয়ে সবার একমত হওয়া প্রয়োজন।