বাংলা ট্রিবিউনকে বাদামতলী-বাবুবাজার চাল আড়ৎদার সমিতির সম্পাদক

চাল রফতানির অনুমতি দেওয়া উচিৎ

চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। চাহিদার তুলনায় এখন বেশি চাল উৎপাদন হচ্ছে। এমন অবস্থায় চাল রফতানির অনুমতি দেওয়া উচিৎ বলে মনে করেন বাদামতলী-বাবুবাজার চাল আড়ৎদার সমিতির সাধরণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন মো. নিজামউদ্দিন
বৃহস্পতিবার সকালে বাবুবাজারে সমিতির কার্যালয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে সরকারের প্রতি এ দাবি জানান তিনি।
চাল ব্যবসায়ীদের সংগঠন আড়ৎদার সমিতির নেতার পাশাপাশি নিজের প্রতিষ্ঠান মাতৃভাণ্ডারের মালিক নিজামউদ্দিন জানান, দেশ এখন চালের ওপর ভাসছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ও আল্লাহর অসীম রহমতে সম্প্রতি দেশে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় বাংলাদেশ এখন চাহিদার অতিরিক্ত চাল উৎপাদন করছে। কৃষক ভালো ফলন পাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেড়ে গেলে দাম পড়ে যাবে। এ কারণেই বর্তমানে চালের দাম খুবই কম। তাই চালের বা ধানের প্রকৃত দাম পেতেই চাল রফতানির অনুমতি দেওয়া উচিৎ। তা না হলে কৃষক উৎপাদন খরচ হারাবে। এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে ধান চাষ না করে অন্যকিছু চাষের কথা ভাববে। এমনটি হলে এক পর্যায়ে ধানচাষ আবার কমে যেতে পারে। তাতে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। বিষয়টি অনুধাবনের সময় এসেছে বলেও মনে করেন এই চাল ব্যবসায়ী।
নিজাম উদ্দিন জানান, গত কয়েকবছরে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ এখন আর তিনবেলা ভাত খায় না। অনেকেই অধিকতর স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ায় দিনে এখন একবেলা ভাত খান। তাই আগের মতো এখন আর চালের চাহিদা নেই। এ কারণেও উদ্বৃত্ত থাকছে চাল। এ বিষয়টিও ভাবতে হবে। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশ থেকেও বৈধ-অবৈধ পন্থায় দেশের অভ্যন্তরে চাল ঢুকছে। ফলে দেশের বাজারগুলো এখন চালে সয়লাব। বেচাকেনা নেই। সব মিলিয়ে আমরা ভালো নেই।
চাল ব্যবসায়ী সমিতির নেতা নিজামউদ্দিন বলেন,পাশের দেশগুলো থেকে যেনো কোনও উপায়ে চাল আসতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন,এখন আর চালের বাজার কারো হাতে নাই। দেশের সর্বত্র বাজার। শুধু চাল নয়। সব কিছুরই একই অবস্থা। আগে এক সময় ছিল ক্রেতারা যেখানে এক টাকা কম দামে চাল বা প্রয়োজনীয় পণ্যটি পেতো,সেখান থেকে গিয়ে ওই পণ্যটি  কিনতো। এখন আর সেইদিন নেই। মানুষের কাছে টাকার চেয়ে সময়ের দাম অনেক বেশি। দুই টাকা বেশি গেলেও যদি কিছুটা সময় বাঁচানো যায় সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই চালসহ নিত্যপণ্য কিনছেন ক্রেতারা।
চাল আড়ৎদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন আরও  জানান, কোনওভাবেই কৃষককে ক্ষতির মুখোমুখি দাঁড় করানো যাবে না। এটি ঠিক হবে না। যদি কোনও কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে কৃষককে সাবসিডি (ভর্তুকি) দিতে হবে। একই সঙ্গে সরকারকে ভালোমানের চাল কেনারও পরামর্শ দেন। 

তিনি বলেন, সরকার যখন নিজের স্টক বাড়াতে বাজার থেকে চাল কেনার কর্মসূচি গ্রহণ করে তখন তাকে ভালোমানের চাল কিনতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনও ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না।এছাড়া সরকারকে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি চাল কেনার বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত করারও পরামর্শ দেন এই ব্যবসায়ী।

দীর্ঘ ৬৮ বছরের চাল ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান নিজাম উদ্দিন নিজে পারিবারিক এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন ৩০ বছর আগে। এখনও আছেন যুক্ত। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি চাল ব্যসায়ীদের সংগঠন বাবুবাজার-বাদামতলী চাল আড়ৎদার সমিতির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন ১৯৮২ সাল থেকে। শুরুতে তিনি এই সমিতির সদস্য পদে এবং পরবর্তীতে কার্যকরী সদস্য পদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার মাহমুদনগরের বাসিন্দা মরহুম খলিলুর রহমানের সন্তান নিজাম উদ্দিনের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে চাইলে জানান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ ভালোভাবে সুন্দরভাবে চলুক। এগিয়ে যাক আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম। শিক্ষিত জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে- এটা দেখাই আমার স্বপ্ন।

 /এসআই/এমএসএম