যেসব কারণে চামড়ার বাজার এবার ইতিবাচক থাকতে পারে

চলতি বছর কোরবানির মৌসুমে চামড়ার বাজারে ইতিবাচক ধারা বইতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি, চামড়াজাত পণ্যের রফতানিতে সাফল্য, কোরবানির পশু বিক্রিতে অনুকূলতা, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ— এই পাঁচটি প্রধান কারণে চামড়ার বাজারে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ইতিবাচক ধারা আশা করা হলেও কিছু শঙ্কাও রয়েছে। যা মোকাবিলায় পূর্ব প্রস্তুতি ও সক্রিয় মনোভাব প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা।

রফতানি বাড়ছে, বাড়ছে চাহিদাও

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত ১১ মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছে প্রায় ১০৬ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। এ প্রবণতা বলছে, বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের চামড়া রফতানির সম্ভাবনা ভালো, যা এবারের কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।

পশু বিক্রি ভালো, অবিক্রিত থাকার আশঙ্কা কম

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, এবছর কোরবানির জন্য ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি গবাদিপশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত ২০ লাখের বেশি পশু থাকলেও, ৫ জুন রাত ১০টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে রাজধানীর অধিকাংশ হাটেই ৯০ শতাংশ পশু বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে পশু অবিক্রিত থাকার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। পশু বিক্রির এই সাফল্য দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সরকারের পদক্ষেপ বাজারে স্থিতিশীলতা আনছে

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবার দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসায় বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ, চামড়া সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ, এবং চামড়ার যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ—এই পদক্ষেপগুলো বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে ভূমিকা রাখবে। এবারের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী, ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়া সর্বনিম্ন ১ হাজার ৩৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে ১ হাজার ১৫০ টাকা এবং প্রতি বর্গফুটের মূল্য ঢাকায় ৬৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৬০ টাকা। খাসি ও বকরির চামড়ার দাম যথাক্রমে ২৭ টাকা ও ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জনসচেতনতা ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার

চামড়া সংরক্ষণের বিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ানো হয়েছে। ৩০ হাজার টন লবণ বিনামূল্যে বিতরণ, প্রামাণ্যচিত্র প্রচার, এবং ৫ লাখ লিফলেট বিতরণ—এসব উদ্যোগ সাধারণ জনগণকে চামড়া ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সচেতন করেছে। ফলে চামড়া নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় কম।

চামড়া রফতানির দরজা খোলা, সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা

বছরের পর বছর ট্যানারি মালিকদের দাবিতে ওয়েট ব্লু ও কাঁচা চামড়া রফতানি বন্ধ থাকলেও, এবার কোরবানির ঈদের পরবর্তী তিন মাসের জন্য রফতানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে চীন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে চামড়া আমদানির বিষয়ে সরকারিভাবে যোগাযোগ করা হয়েছে। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সক্রিয় রয়েছে, যাতে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ন্যায্য দাম পান।
 
তবু কিছু শঙ্কা রয়েই গেছে

চামড়ার বাজারে আশাবাদের পাশাপাশি কিছু উদ্বেগও রয়ে গেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, কাঁচা চামড়ার নির্ধারিত মূল্য এবং রফতানি খাতের হঠাৎ উন্মুক্তকরণ—এসব কারণে ব্যবসায়ীদের একাংশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, ‘প্রতি বর্গফুটে দাম কিছুটা বাড়ানো হলেও বাস্তব খরচ বিবেচনায় নিলে ব্যবসায়ীদের লাভের সম্ভাবনা সীমিত। যেমন, একটি চামড়া ৭০০ টাকায় কিনে লবণ ও শ্রমিক বাবদ খরচ হয় ৩০০ টাকা, হাতবদলে বাড়ে আরও ১০০ টাকা। ফলে দাম দাঁড়ায় ১ হাজার ১৫০ টাকা। এই চামড়া ট্যানারির কাছে কী দামে বিক্রি হবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা টিকবে কিনা, সেটি একটি বড় প্রশ্ন।’