বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসহ তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাদানে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আয়করের হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে সরকার।
রবিবার (২২ জুন) অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলামের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের চূড়ান্ত বাজেটে এই হার কার্যকর হবে, যা আগামী ১ জুলাই থেকে প্রযোজ্য হবে।
এই করহার হ্রাসের ফলে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগে কিছুটা স্বস্তি ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে তখন, যখন দেশজুড়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ১৫ শতাংশ করের বিরোধিতায় সরব ছিলেন।
দীর্ঘ আইনি লড়াই ও প্রেক্ষাপট
২০০৭ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রথমবারের মতো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপ করে। পরে ২০১০ সালে এটি পুনর্ব্যক্ত করা হয়, যেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বাদে অন্যান্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও একই হারে কর দিতে বলা হয়।
এই করের বৈধতা নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ৪৬টি রিট দায়ের করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্ট এনবিআরের দুটি প্রজ্ঞাপনকে অবৈধ ঘোষণা করে, যার বিরুদ্ধে সরকার আপিলের অনুমতি নেয়।
২০২৩ সালের জুন মাসে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখে কর আদায় থেকে বিরত থাকতে এনবিআরকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ ওই আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দেন— দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
এই রায়ের প্রতিবাদে বুধবার (১৮ জুন) রাজধানীর শাহবাগে ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট নেটওয়ার্কে’র ব্যানারে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানান।
সরকারের অবস্থান ও লক্ষ্য
নতুন বাজেটে করহার হ্রাসের মাধ্যমে সরকার একদিকে যেমন শিক্ষা খাতের ওপর চাপ কমাতে চাচ্ছে, অন্যদিকে আইনি জটিলতার বাইরে গিয়ে একটি বাস্তবসম্মত সমাধান দাঁড় করাতে চাইছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরেই কর ছাড় বা কম করের দাবি জানিয়ে আসছিল। এই খাতের উন্নয়নে কর সংক্রান্ত নীতিমালাকে আরও সহনশীল করে তোলাই এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াতে উৎসাহিত করবে এবং শিক্ষার্থীদের আর্থিক চাপও কিছুটা কমাবে। তবে তারা এটিও মনে করিয়ে দেন, কর আদায়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করাও জরুরি।