কাফনের কাপড় পরে এনবিআরে কলম বিরতি, চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানের অপসারণ, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হয়রানি বন্ধ এবং সাম্প্রতিক রাজস্ব অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আবারও কলম বিরতি শুরু করেছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সোমবার (২৩ জুন) সকাল ৯টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন আন্দোলনকারীরা। প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে কাফনের কাপড় পরে হাজির হন তারা।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের হাতে ‘গোলামী আইন বাতিল কর’, ‘বদলির নামে জুলুমবাজি বন্ধ করো, ‘বদলির নামে প্রহসন মানি না, মানবো না’— এমন নানা স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

ঐক্য পরিষদের নেতারা অভিযোগ করেন, আন্দোলন দমন করতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে, যা সরকারি বিধির পরিপন্থি।

কলম বিরতি শুরু করেছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

তারা বলেন, পদায়নের ক্ষেত্রে পাঁচ কর্মদিবসের যোগদানের সময়সীমা না মেনেই বদলি আদেশ জারি করা হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তকে প্রতিহিংসামূলক বলে অভিহিত করেছেন আন্দোলনকারীরা।

গত ১২ মে সরকার এনবিআরকে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ এবং ‘রাজস্ব প্রশাসন বিভাগ’ নামে দুইভাগে বিভক্ত করার অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর প্রতিবাদে এনবিআরের আওতাধীন কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা টানা আন্দোলন চালান। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ মে কলম বিরতি প্রত্যাহার করা হয়। ব্যাখ্যায় বলা হয়, এনবিআর বিলুপ্ত না হয়ে বরং স্বাধীন ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হবে।

এদিকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ তখনও চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানকে পদত্যাগে বাধ্য করার ঘোষণা দেয় এবং তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে।

পরিষদের অভিযোগ, সংস্কার উদ্যোগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান। এমনকি সরকার গঠিত ছয় সদস্যের সমন্বয় কমিটিতেও সংস্কারপন্থি কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

এ বিষয়ে শনিবার (২১ জুন) এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের সভাপতি অতিরিক্ত কর কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এবং মহাসচিব অতিরিক্ত কর কমিশনার মিজ সেহেলা সিদ্দিকা বলেন, সংস্কারপন্থিদের প্রতিনিধিত্ব উপেক্ষা করে গঠিত সমন্বয় কমিটি পুরো প্রক্রিয়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

তারা অভিযোগ করেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পরও এনবিআর ভবন ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে উস্কানিমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে।

ঐক্য পরিষদ দাবি করেছে, সরকার ঘোষিত ছয় সদস্যের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত অধিকাংশ সদস্য আগে থেকেই এনবিআর দ্বিখণ্ডনের পক্ষে মত দিয়েছিলেন এবং অধ্যাদেশকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাই এই কমিটির মাধ্যমে প্রকৃত সংস্কার সম্ভব নয় বলেও তারা মত দেন।

তারা আরও বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান রাজস্ব সংস্কারের প্রতিবন্ধক। সরকারের প্রকৃত সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং রাজস্ব ব্যবস্থায় অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে তিনি সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।

ঐক্য পরিষদ অভিযোগ করেছে, সরকারঘনিষ্ঠ আমলাদের মধ্যে ৪৪ জনের একটি তালিকায় এই চেয়ারম্যান তৃতীয় নম্বরে রয়েছেন, যার ছয় জকে ইতোমধ্যে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।