রোজা সামনে রেখে চলছে কারসাজি

অস্থির পেঁয়াজ ও চিনির বাজার, নেপথ্যে কারা?

রোজা এলেই অস্থির হয়ে ওঠে পেঁয়াজ ও চিনির বাজাররোজা যত এগিয়ে আসছে, ততই অস্থির হয়ে উঠছে চিনি ও পেঁয়াজের বাজার। ‘বলা নেই, কওয়া নেই’, হঠাৎ করে ৪২ টাকা কেজি দরের চিনি খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকায়। রাজধানীর কোনও কোনও মহল্লায় তা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়। এ কারণে রাজধানীর পাড়া মহল্লার চায়ের দোকানগুলোয় প্রতিকাপ চায়ের দাম ৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা করেছে বলে জানা গেছে। চিনির দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সরবরাহ কম। এদিকে, সরবরাহে কম হওয়ার অজুহাতে বেড়েছে পেঁয়াজের দামও। রাজধানীর বাজারগুলোয় প্রকারভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে।

চিনির মূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কে আমদানিকারকরা বলছেন, বেসরকারি চিনি পরিশোধনকারী মিলগুলোয় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। সরবরাহ কমের অজুহাত দিয়ে চিনির দাম বেড়েছে। একইভাবে আমদানিকারকরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় চিনি উৎপাদনকারী সংস্থা চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনও (বিএসএফআইসি) তাদের উৎপাদিত চিনির দাম বাড়িয়েছে। জানা গেছে, তারা প্রতিটন চিনির দাম ৪৪ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪৮ হাজার টাকা করেছে। সেই অজুহাতেও বেড়েছে বেসরকারি কোম্পানির চিনির দাম।

এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার কৃষকরা পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৬ থেকে ৮ টাকা কেজি দরে। আর ফরিদপুরের কৃষকরা পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১০ টাকা কেজি দরে। কোনও অজুহাতেই ৬ থেকে ১০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হতে পারে না বলে মনে করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শওকত আলী ওয়ারেছী। এটি তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন সরকারের এই অতিরিক্ত সচিব। তিনি সোমবার দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, উৎপাদিত পেঁয়াজের সঠিক দাম না পেয়ে অনেক কৃষক হতাশায় ভুগছেন। তারা আগামী বছর পেঁয়াজ উৎপাদন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাজারের এই অস্থিরতার বিষয়ে মনিটরিং বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, সামনে শবে-বরাত ও পরবর্তী সময়ে রমজান। রমজানে চিনি ও পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা আদায়ের চেষ্টা করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। সে সুযোগ তৈরি করতেই অস্থির করে রাখা হচ্ছে চিনি ও পেঁয়াজের বাজারকে। এক শ্রেণির মুনাফাখোরের কারসাজিতেই অস্থির হয়ে বাজারে চিনি ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

কাওরান বাজারে পাইকারি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম লালু জানান, বর্তমানে ৫০ কেজি চিনির বস্তার দাম ২ হাজার ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাতে প্রতিকেজি চিনির দাম পড়ে ৪৯ টাকা। এক মাস আগে  এই ৫০ কেজির চিনির বস্তা বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৮৫০ টাকা দরে। তার মতে, চিনির কেজি এখন ৪৯ টাকা দরে বিক্রি হলেও গত মাসের শুরুর দিকে তা ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

একইভাবে দেশের সর্বত্র এখন পেঁয়াজের মৌসুম। জমি থেকে পেঁয়াজ উঠছে। সেই পেঁয়াজ নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষকরা। বাম্পার ফলন হওয়ার কারণে দামও কম। কিন্তু বাজারে চড়া দামে কিনতে হচ্ছে খুচরা ক্রেতাদের। বিভিন্ন অজুহাতে পেঁয়াজের সরবরাহ কমিয়ে বাজারে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। আর এই সংকটকে কাজে লাগিয়ে মনের মতো দামে বিক্রি করছে পেঁয়াজ। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। প্রকৃত দাম না পেয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে উঠছেন। ৬ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করলে কৃষকরা সীমাহীন ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার কৃষকরা।

/এমএনএইচ/আপ- এপিএইচ/