বাজেট এখন প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী হয়ে গেছে: দেবপ্রিয়

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বাজেট প্রণয়নে প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াগত অসংগতি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। আগের মতো বাজেটের গাম্ভীর্য নেই। বাজেট এখন প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী হয়ে গেছে।

বুধবার (৭ জুন) এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম এবং সিপিডি যৌথভাবে ‘জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪: অসুবিধাগ্রস্ত মানুষগুলো কী পেলো?’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এই কথা বলেন। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় এর আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল।

অনুষ্ঠানে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এবারের বাজেট নির্বাচনের বাজেট হয়নি। রাজনৈতিক উপাদান বিবর্জিত আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাজেট তৈরি করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক জবাবদিহি না থাকলে বাজেট সঠিকভাবে প্রস্তুত করা যায় না। বাস্তবায়নও করা যায় না। রাজনৈতিক উত্তরণের বছরে অর্থনৈতিক সংকটের উত্তরণ যেন বাধাগ্রস্ত না হয়।’

তার মতে, ‘নির্বাচনের বছরের বাজেটে খরচযোগ্য তদারকিহীন টাকা বরাদ্দ থাকে। যদি নির্বাচন করতে চান, তাহলে সামাজিক সুরক্ষা ও জনতুষ্টিতে বেশি বরাদ্দ দেওয়ার কথা। ওএমএসের মতো সামাজিক সুরক্ষায় বেশি বরাদ্দ থাকার কথা। এসব নেই।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘নির্বাচনের বছরে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা কর দেওয়ার প্রস্তাব কেউ দেয়? এতে বড়জোর ৩০০-৪০০ কোটি টাকা আসবে। এটি রাজনীতিহীন নির্বাচনের বছরের বাজেট হয়ে গেছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে এ নিয়ে আলোচনা হলে অনেকেই এমন করের প্রস্তাবে রাজি হতেন না। কিন্তু এ নিয়ে স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়নি, রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচনা হয়নি।’

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মূল্যস্ফীতিকে অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, গত ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করেছে এবং বলেছে যে আগামী বছর তা ৬ শতাংশে থাকবে। মূল্যস্ফীতির মতো মৌলিক পরিসংখ্যান নিয়ে বিবিএস ও অর্থ মন্ত্রণালয় আলাদা পরিসংখ্যান দিচ্ছে।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য উল্লেখ করেন, এমন করলে বাজার উল্টাপাল্টা আচরণ করবে। দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়ে গেছে পরিসংখ্যান। পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। একইভাবে রফতানি, আমদানি, বেসরকারি বিনিয়োগ প্রবাহ—এসবের ক্ষেত্রে তথ্যের অসংগতি তুলে ধরেন তিনি। তার মতে, মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে সুদের হার বাড়াতে হবে। এটা সাধারণ ব্যাকরণের কথা।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।