আমদানি করা চাল এসেছিল, দাম কমেনি কেন?

আমদানির চাল দেশে এলেই দাম কমবে বলে আবারও জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। আগেও একই কথা বলেছিলেন। আমদানির চাল গতবছরও এসেছিল। জুন নাগাদ ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্তও ছিল। তারপরও দাম কমাতে পারেনি সরকার।

খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা জানিয়েছেন, খাদ্যমন্ত্রী এর আগে বলেছিলেন, চাল নিয়ে কেউ কারসাজি করলে লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এ পর্যন্ত কারও লাইসেন্স বাতিল হয়েছে শুনিনি। তিনি সোমবার (১৬ আগস্ট) আবারও বলেলেন, নিয়ম না মানা মিল মালিকদের লাইসেন্স বাতিল হবে।

রাজধানীর চাল ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের প্রশ্ন- আমদানির চাল কবে দেশে এলে দাম কমবে? আর কোন মাত্রার কারসাজি করলে অসাধু ব্যবসায়ীরা শাস্তির আওতায় আসবেন?

সোমবার (১৬ আগস্ট) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘চাল আমদানিতে ট্যাক্স সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। আবারও ট্যাক্স কমিয়ে আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘এলসি খুলে আসতে আসতে দু-তিন সপ্তাহ তো লাগেই। চালের দাম এখনই কমে যাওয়ার কথা। আমদানি শুল্ক কমানোর এসআরও জারির পরই নওগাঁয় প্রতি বস্তায় ১০০ টাকা করে কমেছে। ধানের দাম ৭০ টাকা করে কমেছে।’

মিলারদের কারসাজি নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘২০ হাজার মিল মিলে সিন্ডিকেট করা সম্ভব কি? তবে হ্যাঁ, এদের মধ্যে কেউ কেউ আছে, তাদের অঢেল টাকা। তারা মজুতের চেষ্টা করে। মিলে মজুত না করে গোপনে অন্য কোথাও মজুত করে। সেটি আমরা মনিটরিং করার চেষ্টা করছি। গোয়েন্দা সংস্থাকে চিঠি দিয়েছি। দেশে অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে তারা বাজার থেকে চাল তুলে প্যাকেটজাত করছে। এতেও সরু চালের দাম বাড়ছে বলে জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, ‘চালের আড়তদাররা কারসাজি করে। অনেক সময় মিলের রেটের সঙ্গে ঢাকার পাইকারি রেটের মিল দেখি না। ব্যাংকের সুদহার কমিয়ে দেওয়ায় অনেকেই ঋণ নিয়ে মজুতদারিতে নেমেছে।’

অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট করা হচ্ছে। কেউ মজুত রাখলে বিশেষ ক্ষমতায় মামলার নির্দেশ দেওয়া আছে। প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরও মামলা করতে পারবে।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী, গত এক দশকে (২০১০-১১ অর্থবছর) প্রতি কেজি (মাঝারি মানের) চালের গড় দাম ছিল ৪১ টাকা, যা এখন ৬০ টাকাতেও কিনতে হচ্ছে । গত অর্থবছরও (২০১৯-২০) প্রতি কেজি চালের গড় দাম ছিল ৫৬ টাকা। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক দশকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আগ পর্যন্ত চালের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৪৬ টাকা। এরপর হঠাৎ করেই ৫৩ টাকায় ওঠে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দাম এক টাকা কমলেও এরপর আবার বাড়তে থাকে।

তথ্য বলছে, ২০১৫-১৬ পরবর্তী বছরগুলোতে চালের দাম ছিল যথাক্রমে ৫৩ টাকা, ৫৫ টাকা, ৫৭ টাকা ও ৫৬ টাকা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাওরানবাজারের চাল ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন জানিয়েছেন, চালের দাম কবে কমবে জানি না। সরকার আগেও বলেছিল, আমদানি করা চাল দেশে এলে কমবে, কিন্ত কমেনি।

বেসরকারি ব্যাংকের কর্মচারী সাহাবউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, মন্ত্রী নিজেও বললেন, চাল নিয়ে মিলাররা কারসাজি করছেন। এই মিলাররা কি সরকারের চেয়েও শক্তিশালী? তাদের শাস্তি হচ্ছে না কেন? 

এদিকে কৃষি অধিদফতরের তথ্যমতে এক দশক আগেও দেশে চালের উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৩৫ লাখ টন। যা এখন (২০১৯-২০ অর্থবছর) তিন কোটি ৮৭ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পর থেকে প্রতিবছর চালের উৎপাদন প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টন করে বেড়েছে।