‘ব্যাংকিং খাত এখন চরম সংকটের মুখোমুখি’

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত বর্তমানে চরম সংকটের মুখোমুখি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ। তিনি জানান, খেলাপি ঋণের লাগামহীন বৃদ্ধির ফলে আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে এবং বিনিয়োগ প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে।

শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীর ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে আয়োজিত ‘বর্তমান ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ: ঋণগ্রহীতাদের দৃষ্টিকোণ’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তাসকিন আহমেদ জানান, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৪ শতাংশেরও বেশি। এই বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের ফলে নতুন করে ঋণ পাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এসএমই খাতসহ উৎপাদনমুখী উদ্যোক্তারা মারাত্মক বিপাকে পড়ছেন। একইসঙ্গে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে, যা উদ্বেগজনক।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে অবস্থান করায় নীতিগত সুদহার বাড়াতে হচ্ছে, ফলে তারল্য সংকুচিত হচ্ছে এবং মূলধনের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ওপর।’

তাসকিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের সংস্কার শুধু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং ঋণগ্রহীতাদের অবস্থান বিবেচনায় নিয়েই করতে হবে। না হলে বিনিয়োগ, উদ্ভাবন ও প্রতিযোগিতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।’

সংকট উত্তরণে প্রস্তাবনা

ডিসিসিআই সভাপতি এ সংকট উত্তরণে একাধিক প্রস্তাবনা দেন। এর মধ্যে রয়েছে— ঋণগ্রহীতাদের পুনর্বাসনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ; উৎপাদনমুখী খাত যেমন-এসএমই, কৃষি ও সবুজ শিল্পে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেওয়া; সেক্টরভিত্তিক প্রণোদনা ও গ্যারান্টি স্কিম চালু; ঋণের শর্ত শিথিল করে দীর্ঘ মেয়াদে পরিশোধের সুযোগ সৃষ্টি; ঋণ শ্রেণিকরণ সময়সীমা ছয় মাস বাড়ানো এবং ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত খেলাপি আলাদা করে চিহ্নিত করা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (মুদ্রানীতি বিভাগ) ড. মো. এজাজুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিভারস্টোন ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী এবং ডিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মো. আশরাফ আহমেদ। এছাড়া সেমিনারে বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী নেতা, ব্যাংকার এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।