ইতোমধ্যেই হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা ও প্রকৌশল শিল্প রফতানি হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে তৈরি পোশাক, হিমায়িত মাছ, ওষুধ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, চা, সিরামিকস, বস্ত্র, হোম টেক্সটাইল, হালকা প্রকৌশল পণ্য এবং বাই সাইকেল। এছাড়া, বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সাপের বিষ, কুমির, কচ্ছপ, কুঁচে মাছ ও কাঁকড়ার বাজার রয়েছে বলে জানিয়েছে ইপিবি। রফতানির উদ্দেশ্যে দেশে বাণিজ্যিকভাবে কুমির, কচ্ছপ, সাপ, কুঁচে মাছ ও কাকঁড়ার চাষ হচ্ছে বলেও জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র।
২০২১ সালের মধ্যে রফতানি আয় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করতে গেলে এর পরিধি আরও বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে ৫০ বিলিয় ডলারের পণ্য রফতানি হবে। এর জন্য রফতানি পণ্যেও বহুমুখীকরণ প্রয়োজন। এ জন্য সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ডিসিদের নিজ নিজ জেলা থেকে রফতানি করা যায়, এমন অন্তত একটি পণ্য খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন কিছু পণ্য রয়েছে, দেশের বাইরে সেসব পণ্যের চাহিদা রয়েছে। তাই এবারের ডিসি সম্মেলনে আমাদের স্লোগান ছিল ‘এক জেলা এক পণ্য’।
দেশের রফতানি পরিস্থিতি নিয়ে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সবজি ও ফল রফতানি করে বাংলাদেশ ১ হাজার ১০৫ কোটি ৪১ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় করেছে। সম্প্রতি এ খাতের পণ্যমান নিয়ে বৈশ্বিক পরিস্থিতির নেতিবাচক ধারণার কারণে রফতানি কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কম লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হয়েছিল। ওই বছর সবজি ও ফল রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১২ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার বা ৯৯০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে জুলাই-২০১৫ থেকে মে ২০১৬ পর্যন্ত সময়ে ফল রফতানি হয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। আর সবজি রফতানি হয়েছে ২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার মূল্যের। যদিও নিবন্ধিত রফতানিকারক ছাড়া কেউ সবজি ও ফল রফতানি করতে পারে না। যারা নিবন্ধন করেননি তাদের লাইসেন্স বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত পরিপালনের পাশাপাশি নতুনভাবে আইন মেনে লাইসেন্স ইস্যু ও প্রশিক্ষণের উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে।
বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ মতে, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ক্রমশ বড় হচ্ছে ফলের বাজার। একইসঙ্গে বাড়ছে সবজির বাজারও। পাহাড়ি ও সমতল এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় ফল ও সবজি উৎপাদন বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে এসব পণ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদাও। এই চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত অংশ কয়েক বছর ধরেই দেশের বাইরে রফতানি হচ্ছে। কিন্তু বিক্ষিপ্তভাবে রফতানি করতে গিয়ে রফতানিকারকরা নানাভাবে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন এমন অভিযোগও আমলে নিয়ে যৌথভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে একইসঙ্গে ফলন বৃদ্ধি, গুণগতমান রক্ষা, ফলের স্বাদ ও রং বহুমুখীকরণের উদ্যোগের পাশাপাশি বৈধভাবে রফতানিতেও উৎসাহিত করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে রফতানি বাড়াতে নানাবিদ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ বিশ্বে বাংলাদেশি মিশন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, কমার্শিয়াল কাউন্সিলরের সংখ্যাবৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে সরকার আরও ৫ জন কমার্শিয়াল কাউন্সিলর নিয়োগসহ সিঙ্গাপুর, চীনের কুনমিং, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইস্তাম্বুলে নতুন কমার্শিয়াল উইং খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্টরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে।
ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে অ-শুল্ক বাধাগুলো দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেখানেই অ-শুল্ক বাধা শনাক্ত হচ্ছে, সেখানেই বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়েও বৈঠক হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগামী দিনে বাংলাদেশ এ লক্ষ্যমাত্রা ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায় বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি জানান, ইতোমধ্যেই বাংলাদেশি পণ্যের নতুন বাজার খোঁজা হচ্ছে। একইসঙ্গে চলছে পণ্যের বহুমুখীকরণও। এ দুটি কার্যক্রম শতভাগ সফল হলে ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্বের ১৭টি দেশের ১৯টি প্রধান শহরে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল উইং রয়েছে। সেখানে কর্মরত আছেন কমার্শিয়াল কাউন্সেলর, ফার্স্ট সেক্রেটারি ও ইকনোমিক মিনিস্টার পদের কর্মকর্তারা।
সূত্র মতে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ও লস এঞ্জেলস, জার্মানির বার্লিন, যুক্তরাজ্যের লন্ডন, ফ্রান্সের প্যারিস, স্পেনের মাদ্রিদ, কানাডার অটোয়া, বেলজিয়ামের ব্রাসেলস, ভারতের নয়াদিল্লি ও কলকাতা, জাপানের টোকিও, চীনের বেইজিং, ইরানের তেহরান, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন, রাশিয়ার মস্কো, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর ও সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বাংলাদেশের বাণিজ্য শাখা (কমার্শিয়াল উইং) রয়েছে।
/এমএনএইচ/আপ-এবি
আরও পড়ুন
কৃষি ঋণ বিতরণে রূপালী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং চালু
অর্থনীতির নতুন শঙ্কা: কমছে প্রবাসী আয়