চট্টগ্রামে চামড়া ব্যবসায়ে ধসের আশঙ্কা





চট্টগ্রাম অঞ্চলের চামড়ার ব্যবসায়ীরা আসন্ন ঈদে লোকসানের আশঙ্কা করছেন, ছবি- সংগৃহীতচট্টগ্রাম অঞ্চলের চামড়ার ব্যবসায়ীরা আসন্ন ঈদে লোকসানের আশঙ্কা করছেন। পরিবেশ দূষণ রোধের দায়ে গত বছর পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের দুটি ট্যানারির উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। পরিবেশ আইন মেনে পরিশোধনাগার (ইটিপি) চালু না করায় ট্যানারি দুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
চট্টগ্রামের চামড়া ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, আসন্ন ঈদের আগেই চট্টগ্রামের বন্ধ দুটি ট্যানারি চালু না করলে চামড়া ব্যবসায়ে ধস নামতে পারে। এর ফলে ঢাকার চামড়া ব্যবসায়ীরা একচেটিয়া ব্যবসা করে নেবে। এ ছাড়া লবণের দাম বৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যে তারা ব্যবসায় লোকসানের আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন।
তারা জানাচ্ছেন, চট্টগ্রামের দুটি ট্যানারি বন্ধ করে দেওয়ায় মজুদ রাখা প্রায় ৮০ লাখ স্কয়ার ফুট চামড়া নষ্ট হওয়ার পথে। এ কারণে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার মণ মজুদ লবণ এখনও বিক্রি হয়নি।
চট্টগ্রাম চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ২০০টি চামড়ার গুদাম রয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মুসলিম উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামের দুটি ট্যানারি বন্ধ করে দেওয়ার কারণে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কারণ, শতকরা ৫০ ভাগ চামড়া এই দুটি ট্যানারি আমাদের কাছ থেকে নগদে কিনতো। বাকি ৫০ ভাগ চামড়া বাকিতে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করতাম আমরা।
চামড়া ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত ঈদ-উল আজহায় তারা ৫.৫০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করেছিলেন।
চট্টগ্রামের চামড়া ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে প্রতিদিন তারা ৮০০ থেকে ১০ হাজার মহিষ ও গরুর চামড়া এবং আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করেন।
চট্টগ্রাম চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সেকান্দার মিয়া জানান, প্রতি স্কয়ার ফুট লবণ না দেওয়া গরুর চামড়া ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। মহিষের চামড়া ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে এবং প্রতি স্কয়ার ফুট ছাগলের চামড়া ১৪ টাকা থেকে ২৪ টাকায় বিক্রি হয়।
তিনি বলেন, গত বছর ৭৪ কেজি লবণযুক্ত চামড়া বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা দরে। লবণের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি স্কয়ার ফুটে তাদের অতিরিক্ত ১০ টাকা করে গুণতে হয়েছে।
চট্টগ্রামের চামড়া ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্যের দাম পড়ে গেছে। এ কারণে তাদের প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে। সরকার যদি বন্ধ ট্যানারি দুটি ফের চালুর উদ্যোগ না নেয়, তাহলে তাদের চরম লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তাই, তারা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, যেন খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ ট্যানারি দুটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের চামড়ার ব্যবসায়ীরা আসন্ন ঈদে লোকসানের আশঙ্কা করছেন, ছবি- সংগৃহীতএ প্রসঙ্গে মদিনা ট্যানারির মালিক আবু মোহাম্মদ বলেছেন, এক সময় সারাদেশের মধ্যে চট্টগ্রামের টানারি চামড়া সংগ্রহে এগিয়ে ছিল। কিন্তু চট্টগ্রামের দুটি ট্যানারি বন্ধ করে দেওয়ার কারণে তারা বৈষম্যের শিকার ও ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি সরকারের কাছে অবিলম্বে চট্টগ্রামের বন্ধ ট্যানারি দুটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানান।
আবু মোহাম্মদ আরও বলেন, তার মালিকাধীন মদিনা ট্যানারিতে ৩০ লাখ পিস চামড়া মজুদ রয়েছে এবং ট্যানারি বন্ধ থাকার কারণে এগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে রিফ লেদার লিমিটেডের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড সেল) মোকলেছুর রহমান বলেন, তারা ইটিপি (পরিশোধনাগার) ইতোমধ্যে নির্মাণ শুরু করেছেন।
রিফ লেদারের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে ইটিপি নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু ট্যানারিতে ৩০ লাখ স্কয়ার ফুট মজুদ চামড়া বিনষ্টের পথে।
ট্যানারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের আগে চট্টগ্রামে ১৮টি ট্যানারি ছিল। স্বাধীনতার পর এই সংখ্যা ২১টিতে উন্নীত হয়। কিন্তু মাত্র দুটি ট্যানারি মদিনা ট্যানারি ও রিফ লেদার লিমিটেড শেষ পর্যন্ত টিকে ছিল। কিন্তু পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন না করা পর্যন্ত পরিবেশ অধিদফতর ট্যানারি দুটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। গত বছরের ১৭ জুন থেকে মদিনা ট্যানারি এবং রিফ লেদার ১ আগস্ট থেকে বন্ধ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ট্যানারি দুটি খোলার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। কিন্তু পরিবেশ দূষণ রোধে এই ট্যানারি দুটিতে ইটিপি চালু করতে হবে।
তিনি জানান, এই ট্যানারি দুটির অপরিশোধিত বর্জ্যের কারণে জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। এই বর্জ্যের কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছিল।
/এবি/