সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের জন্য ঋণ সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রকল্পটি গত ৩১ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের আওতায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আগামী ২০২০ সালের ৩০ জুন মেয়াদের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে।
এনবিআরের একজন কর্মকর্তা জানান, বৈদেশিক বাণিজ্যে পণ্য আমদানি ও রফতানি প্রক্রিয়াকরণ করা, ছাড়পত্র দেওয়া ও খালাস করতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের একটি উচ্চ অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। এ সংক্রান্ত বন্দরের কার্যক্রমে কারগো ও মালবাহী যান ছাড়ে প্রক্রিয়াকরণ চেইনের বিভিন্ন পর্যায়ে কালক্ষেপণ ঘটে। ১৯৯০ সালের বাণিজ্য উদারীকরণের পরও আমদানি ও রফতানি কার্যক্রমে কার্গোর মাধ্যমে মালামাল খালাস প্রক্রিয়া এখনও কষ্টসাধ্য। এতে বিপুল পরিমাণ ডকুমেন্ট ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ করতে হয়, যা বৈদেশিক বাণিজ্যে বাধার সৃষ্টি করে এবং লেন-দেন সংক্রান্ত ব্যয় বাড়ে। এর ফলে বেসরকারি ব্যক্তি উদ্যোক্তাপর্যায়ে বাণিজ্য পরিচালনায় ও বিনিয়োগ পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ে। এ অবস্থায়, সংশোধিত কিয়োতো কনভেনশন এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) বাণিজ্য ট্রেড ত্বরান্বিকরণ শর্ত অনুযায়ী সরকার ন্যাশনাল সিঙ্গাল উইন্ডো (এনএসডব্লিউ) পদ্ধতি অনুসরণের পদক্ষেপ নিয়েছে।
এনবিআর জানিয়েছে, এর মাধ্যমে একটি সেবা পয়েন্টে বৈদেশিক বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজ অটোমেশনের মাধ্যমে নিষ্পন্ন করা সম্ভব হবে। ফলে দ্রুত আমদানি, রফতানি পদ্ধতি সম্পন্ন হবে এবং ডকুমেন্ট ভিত্তিক কাজ সহজ হবে। এর মধ্যে রয়েছে পারমিট, লাইসেন্স, সার্টিফিকেট, অনুমোদন, কাস্টমস ডকুমেন্টস ইত্যাদি।
প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিস সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ৮টি সুফল পাওয়া যাবে। এগুলো হচ্ছে— ইলেকট্রনিক, অনলাইন সমাধান প্রবর্তনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রক্রিয়া দ্রুততর ও আরও স্বচ্ছ হবে; আন্তর্জাতিক পণ্য খালাসের পরিমাণ বাড়বে; ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় ও সময় কম লাগবে; বিধিগত প্রয়োজনীয়তা হতে শুরু করে পণ্য খালাস পর্যন্ত সামগ্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে সঙ্গতি ও নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে; নিবন্ধিত বেসরকারি খাতের অংশীজন (স্টেক হোল্ডার) এবং সরকারি সংস্থাগুলোর জন্য প্রক্রিয়াগত দক্ষতা বাড়ানো ও স্বয়ংক্রিয় করার লক্ষ্যে ব্যবহারকারীবান্ধব ইলেক্ট্রনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে; নিবন্ধিত বেসরকারি খাতের স্টেকহোল্ডার এবং সরকারি সংস্থাগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত পারমিট, লাইসেন্স, সার্টিফিকেট ও শুল্ক পদ্ধতি নিশ্চিত করা হবে; আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রশাসন উন্নত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের জন্য তথ্যের উৎস বৃদ্ধি করা এবং আমদানিকারক, রফতানিকারক ও সরকারের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়বে।
বিশ্বব্যাংক সূত্র জানায়, প্রকল্পটির প্রধান প্রধান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের আইটি সিস্টেম প্রবর্তন। এছাড়া এতে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সংগ্রহ এবং স্থাপন করা হবে। নেওয়া হবে অংশীজনের পরামর্শ সেবাও।
উল্লেখ্য, প্রকল্পের কাজ ত্বরান্বিত করতে ১টি এফএইচডি গাড়ি ও ৩টি মাইক্রোবাস কেনা হবে ও প্রয়োজনীয় অফিস সরঞ্জাম, আসবাবপত্র ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী কেনা হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনবিআরের চেয়ারম্যান সরকারের সিনিয়র সচিব নজিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য স্বচ্ছ ও গতিশীল হবে। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে।