বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি

‘বিনিয়োগ বাড়াতে দরকার ওয়ান স্টপ সার্ভিস’

কর্মসংস্থান বাড়াতে প্রয়োজন বিনিয়োগ। আর বিনিয়োগ বাড়াতে দরকার ওয়ান স্টপ সার্ভিস। বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন।

বাংলা ট্রিবিউন: ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা এখন কেমন আছেন?

হেলাল উদ্দিন: ছোট দোকানদার বা ফুটপাতে যারা ব্যবসা করতেন, তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। করোনায় বসে থেকে তাদের জমানো পুঁজি শেষ। পুঁজির জন্য আমরা বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ধরনা দিয়েছিলাম। কিন্তু সহযোগিতা পাইনি। এটি দুঃখজনক। পরে আইএফআইসি ব্যাংকের কর্ণধার ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং নতুন যাত্রা শুরু করা বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের কর্ণধার ও এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান সভাপতি জসীম উদ্দিনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওই দুটি ব্যাংক থেকে অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিনা জামানতে ৫০ হাজার টাকা ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পেয়েছে। তবে সংখ্যাটা খুবই কম। আরও সহায়তা প্রয়োজন।

বাংলা ট্রিবিউন: বেচাকেনা কেমন চলছে ব্যবসায়ীদের?

হেলাল উদ্দিন: বাজার, দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমল খুলেছে। তবে সেভাবে কেনাবেচা হচ্ছে না। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া এখনও মানুষ মার্কেটে যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। ক্রেতাদের বাজারমুখি করতে ব্যবসায়ীরা ১০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছেন। একটার সঙ্গে একটা ফ্রি অফারও করছেন। চেষ্টাটা চলছে।  

বাংলা ট্রিবিউন: এ ছাড়া আর কোন ধরনের সমস্যায় আছেন ব্যবসায়ীরা?

হেলাল উদ্দিন: ট্রেড লাইসেন্স, বিদ্যুৎ, গ্যাস-পানির সংযোগ, লাইসেন্স, ব্যাংক ঋণসহ নানা কাজে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না। ঘুষ ছাড়া কাজ করতে অনেকেরই অনীহা। ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কিছুতেই এ সময় ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা যাবে না।

অনেক সময় দেখা যায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার আসনে নাই। আবার কেউ ছুটিতে। করোনার কারণে উপসচিব এবং এর নিচের পদের কর্মরতরা প্রায় দেড় বছরই ঘরে বসে বেতন নিয়েছেন। এখন সরকার অফিস খুলেছে। এই সময় তাদের ছুটিতে থাকা এবং সিটে না পাওয়াটা দুঃখজনক। করোনা সংকট কাটিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনিয়োগের স্বার্থে সরকারি কর্মকর্তাদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ছুটি বাতিল করা উচিৎ। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে ওয়ান পয়েন্ট সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে। এতে ঘুষজনিত হয়রানি কমবে।

বাংলা ট্রিবিউন: ই-কমার্স নিয়ে সম্প্রতি বেশ হইচই হচ্ছে? বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?

হেলাল উদ্দিন: বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও কর্মসংস্থানে ই-কমার্স একটি মাইল ফলক। এর দ্বারা আমরাও উপকৃত হচ্ছিলাম। ছোট ছোট ই-কমার্সগুলো কিন্তু কারও সঙ্গে প্রতারণা করেনি। শত শত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটির কারণে পুরো ই-কমার্স সিস্টেমকে দায়ী করা ঠিক নয়। বরং এর পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। তবে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকার মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ডলারের মূল্য বৃদ্ধি এবং বাজার থেকে কতিপয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়ার কারণে বাজারে টাকার সংকটও সৃষ্টি হয়েছে। অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মার্কেট থেকে ছিটকে পড়েছেন। এদের ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ছাড়া অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকে আছে যাদের ১৫ হাজারের মতো টাকা হলেই একটা কিছু শুরু করতে পারে। তাদের আর্থিক সহায়তাটা দেওয়া দরকার। এমন ব্যবসায়ী আছে বড়জোর ৫০ হাজার। এর জন্য সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল প্রয়োজন।