এখন থেকেই রিটার্ন জমা দেওয়ার পরামর্শ এনবিআরের

মহামারি করোনার কারণে এবারও আয়কর মেলার আয়োজন করছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), তবে কর অঞ্চলগুলোতে ঠিকই ‘মেলা’ বসেছে। অর্থাৎ প্রতিটি কর অঞ্চলেই মেলার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। একেবারে মেলার আবহ তৈরি করে কর দাতাদের বিশেষ সেবা দেওয়া হচ্ছে। রাজধানীর সেগুনবাগিচা, বেইলি রোড, পুরনো পল্টনসহ বেশ কয়েকটি কর অঞ্চল ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। কর দাতাদের সুবিধার জন্য কর অঞ্চলগুলোতে পুরো নভেম্বরজুড়ে চলবে এই বিশেষ সেবা।

সোমবার (১ নভেম্বর) থেকেই এ সেবা শুরু হয়েছে। এদিকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলে ‘মেলার মতোই’ এনবিআরের কর্মকর্তাদের সহায়তা পাচ্ছেন করদাতারা। গত তিন দিন ধরে মেলার পরিবেশে রিটার্ন জমা নেওয়া হচ্ছে। কর অঞ্চলগুলোতে উপচে পড়া ভিড় না থাকলেও করদাতাদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (করনীতি) আলমগীর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাতীয়ভাবে আয়কর মেলা না হলেও কর অঞ্চলগুলোতে ‘মেলার মতোই’ সেবা পাচ্ছেন করদাতারা। আমরা টানা ৩০ দিন আয়কর মেলার সব সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ এ জন্য শেষ দিনের অপেক্ষা না করে এখন থেকেই রিটার্ন জমা দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

আলমগীর হোসেন বলেন, ‘শেষ দিনের অপেক্ষা করে যাদের রিটার্ন জমা দেওয়ার অভ্যাস, তারা শেষে গিয়ে জটলায় পড়তে পারেন। যারা আগে রিটার্ন জমা দেবেন, তারা ভোগান্তি থেকে ও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকবেন।’ তার মতে, সাধারণত নভেম্বরের শেষের দিকে ভিড় হয়, জনসমাগম বাড়ে। 

এনবিআরের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা (পরিচালক) সৈয়দ এ মু’মেন বলেন, ‘আয়কর মেলার চেয়েও অনেকাংশে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন করদাতারা। এখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেও মেলার মতো পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।’

তিনি উল্লেখ করেন, বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে পুরো মাসজুড়ে। করদাতাদের বাড়তি সুবিধা দিতে নভেম্বরের প্রথম দিন থেকেই প্রতিটি কর অঞ্চলে ‘হেল্প ডেস্ক’ বসানো হয়েছে। মাসব্যাপী আয়কর বিষয়ক সেবা প্রদান, রিটার্ন গ্রহণ, তথ্য সেবা প্রদান এবং সব কর অফিসে ইটিআইএন রেজিস্ট্রেশন ও ই-ফাইলিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। করদাতারা রিটার্ন জমা দেওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে কর পরিশোধের প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পাচ্ছেন। এসব বুথেই ইটিআইএন নিবন্ধন ও পুনর্নিবন্ধন সেবাও মিলছে।

সরকারি কর্মকর্তাদের রিটার্ন দাখিলের সুবিধার জন্য ১-১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ সচিবালয় ও অফিসার্স ক্লাবে রিটার্ন গ্রহণ বুথ ও হেল্প ডেস্ক থাকবে। এছাড়া সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের জন্য ঢাকা সেনানিবাসের সেনা মালঞ্চে ৯ ও ১০ নভেম্বর দুই দিন রিটার্ন গ্রহণ এবং কর বিষয়ে যাবতীয় তথ্য সেবা দেওয়া হবে। প্রতিটি কর অঞ্চলের ওয়েবসাইটে কর সংক্রান্ত সব হালনাগাদ তথ্য পাবেন করদাতারা। পাবেন বিভিন্ন ফরম, পরিপত্র ও রিটার্ন পূরণের নির্দেশিকা।

জানা গেছে,  এ মাসে জাতীয় ট্যাক্স কার্ড এবং জেলা ও সিটি করোপোরেশনের সেরা করদাতাদের সম্মাননা দেওয়ার আয়োজন করেছে এনবিআর। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের চারটি কর অঞ্চলে কেন্দ্রীয়ভাবে ও অন্য সব কর অঞ্চল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যথাযথ আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে জেলা ও সিটি করপোরেশন-ভিত্তিক সেরা করদাতা সম্মাননা দেবে এনবিআর।

করমুক্ত আয়সীমা

বর্তমানে ব্যক্তি শ্রেণির সাধারণ করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ সাধারণ করদাতাদের তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের জন্য কর দিতে হয় না। তবে নারীদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। একইভাবে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী এবং তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের ক্ষেত্রেও করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড় প্রতিবন্ধী করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এছাড়া কোনও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বাবা-মা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যেক সন্তানের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০ হাজার টাকার বেশি হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বাবা-মা উভয়েই করদাতা হলে যেকোনও একজন এই সুবিধা পাবেন।

কার কত টাকা কর দিতে হবে

কারও বার্ষিক আয় ৩ লাখ টাকার কম হলে শুধু রিটার্ন জমা দিলেই হবে। কোনও টাকা জমা দিতে হবে না। তবে যার বার্ষিক আয় ৪ লাখ টাকা তার প্রথম ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর কোনও কর দিতে হবে না। পরবর্তী এক লাখ টাকার ওপর ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। অর্থাৎ ৪ লাখ টাকা আয় করা করদাতাকে ৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে। অবশ্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা। অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪ হাজার এবং সিটি করপোরেশনের বাইরে ৩ হাজার টাকা। যেমন ধরা যাক, কারও আয় যদি ৩ লাখ ১০০ টাকা হয়, ৫ শতাংশ হার ধরে তার কর হয় ৫ টাকা। কিন্তু তিনি যদি ঢাকা সিটির বাসিন্দা হন, তাকে অন্তত ৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে।

ফলে কারও বার্ষিক আয় ৩ লাখ টাকার পর প্রথম এক লাখে ৫ শতাংশ হারে, পরবর্তী ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে, তার পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে, তার পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ২০ শতাংশ হারে এবং অবশিষ্ট মোট আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।