নতুন দিগন্তে পৌঁছাতে খুললো বিদেশে বিনিয়োগের পথ

দেশি উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত হলো অবশেষে। নতুন করে স্বপ্ন দেখার দিন শুরু দেশের ব্যবসায়ীদের। এ নিয়ে ইতোমধ্যে বিধিমালাও দিয়েছে সরকার। সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। সবাই বলছেন, এতে এক নতুন দিগন্তের পথে যাত্রা শুরু করলো বাংলাদেশের অর্থনীতি।

গত ১৬ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। এই বিধিমালাকে মূলধনী হিসাব লেনদেন (বিদেশে ইকুইটি বিনিয়োগ) বিধিমালা, ২০২২ বলা হচ্ছে।

 

সম্পদের ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করা যাবে

বিধিমালার ক্ষমতা বলে স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ হিসেবে সহযোগী প্রতিষ্ঠান তৈরি কিংবা কোনও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনতে পারবে।

রফতানিকারকরা বিদেশে সহযোগী প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য গত ৫ বছরের বার্ষিক গড় রফতানি আয়ের ২০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবেন। নীতিমালা অনুযায়ী, রফতানিকারকদের হাতে আরেকটি বিকল্প আছে। তারা চাইলে সর্বশেষ নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে দেখানো নিট সম্পদের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে ইকুইটি বিনিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটি প্রয়োজনে তার নিরিখে বিনিয়োগের সীমা কমাতে বা বাড়াতে পারবে।

নতুন এই বিধিমালায় বলা হয়েছে, উদ্যোক্তারা রফতানি থেকে অর্জিত আয়ের একটি অংশ এক্সপোর্ট রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) অ্যাকাউন্টে রেখে থাকেন। বিদেশে বিনিয়োগের যোগ্যতা অর্জনের জন্য রফতানিকারকদের তাদের ইআরকিউ অ্যাকাউন্টে যথেষ্ট পরিমাণ স্থিতি রাখতে হবে।

 

ইতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে

ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা বলছেন, বহির্বিশ্বে বিনিয়োগ যেমন বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রকাশ ঘটাবে, তেমনি এতে নতুন নতুন বাজার দখলের পাশাপাশি মধ্যবর্তী প্রক্রিয়াকৃত পণ্য কম মূল্যে আমদানি ও বিদেশি প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকারের সুযোগও তৈরি হবে।

বিনিয়োগকৃত দেশের সম্পদ, কাঁচামাল ও প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার তৈরি হওয়ায় কোনও একটি প্রতিষ্ঠানের নানামুখী সামর্থ্য ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নিজের দেশও নানাভাবে উপকৃত হবে। এ ছাড়া দেশের সামগ্রিক ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতেও ভূমিকা রাখবে এ সিদ্ধান্ত। সবচেয়ে বড় কথা, বিনিয়োগকৃত দেশগুলো থেকে ব্যবসার মুনাফা ফিরে আসার ফলেও দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি আসবে।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের অনুমতি না দেওয়া হলেও টাকা এমনিতেই চলে যাবে। এর চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেওয়ায় ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে কেনিয়া, কম্বোডিয়া, জর্ডানসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের বেশ কিছু কারখানা হয়েছে। কাজেই নীতিমালা হওয়ায় এখন জবাবদিহিও থাকবে।

 

ব্যবসায়ীরা খুশি

বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মেট্রোপলিটন চেম্বারের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, সরকারের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। দীর্ঘমেয়াদে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে আমাদের অর্থনীতিতে। তিনি উল্লেখ করেন, দেশে ব্যবসার ‘ডুইং বিজনেস’-এর জন্য এই বিধিমালা সহায়ক হবে। তিনি বলেন, চেম্বারের নেতারা এখন এই বিধিমালা পর্যালোচনা করছেন।

এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমই-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, দেশি উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত করে দেওয়ায় অবশ্যই সরকার সাধুবাদ পেতে পারে। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগও যাতে দেশে আসে সে ব্যাপারে উদ্যোগী হতেও সরকারের প্রতি পরামর্শ দেন তিনি।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এর ইতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে পড়বে। তবে দেশের যেসব উদ্যোক্তা টাকা দেশের বাইরে নিতে পারে না, তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে দেশের বাইরে সহযোগী প্রতিষ্ঠান বা অফিস খোলার অনুমতি দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ৫টি প্রতিষ্ঠান ভারত, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরবে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ফার্মাসিউটিক্যাল ও খেজুরের ব্যবসায় বিনিয়োগ করার অনুমতি পেয়েছে। এর আগে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০টি প্রতিষ্ঠানকে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইথিওপিয়া ও কেনিয়ায় সহযোগী প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেয়।

 

আবেদনের পূর্বশর্ত ও যোগ্যতা

নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব রফতানিকারীর ইআরকিউ অ্যাকাউন্টে যথেষ্ট পরিমাণ স্থিতি আছে, তারা অন্যান্য দেশে বিনিয়োগের আবেদন জানাতে পারবেন। আবেদনকারীকে আর্থিকভাবে সচ্ছল ও পাঁচ বছর কার্যকর থাকতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত ‘গাইডলাইন অন রিস্ক বেইজড ক্যাপিটাল অ্যাডিকোয়েসি’-এ নির্ধারিত ম্যাপিং অনুযায়ী আবেদনকারীর ক্রেডিট রেটিং গ্রেড অন্তত ২ হতে হবে।

দেশের বাইরে বিনিয়োগ প্রস্তাবনার ব্যবসায়িক কার্যক্রম সাধারণভাবে আবেদনকারীর বাংলাদেশস্থ ব্যবসায়িক কার্যক্রমের অনুরূপ বা সহায়ক বা সম্পূরক হতে হবে।

বিনিয়োগ প্রস্তাবটি নির্ভরযোগ্য সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অর্থনৈতিকভাবে টেকসই হতে হবে।

বিনিয়োগ প্রস্তাবটিতে ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনাময় উৎস পাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে রফতানি বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকতে হবে।

এ ছাড়া বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকতে হবে।

আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক ব্যবসায় পরিচালনা, অর্থায়ন ও বিনিয়োগে দক্ষ ও অভিজ্ঞ মানবসম্পদ থাকতে হবে।

 

অনুমোদনের পর যেসব কাগজ জমা দিতে হবে

সংস্থাগুলোকে কোনও খেলাপি ঋণ বা অসমন্বিত পুনর্গঠিত বৃহৎ ঋণ নেই এবং শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর অপরিশোধিত নেই, এই মর্মে আলাদা দুটি সনদ দিতে হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান বিস্তারিত বিবরণ, বিদেশি সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে বিনিয়োগের বিস্তারিত বিবরণ, বিদেশে বিনিয়োগ প্রস্তাবকারী কোম্পানির পরিচালকদের অঙ্গীকারনামা, অনুমোদনের সময় প্রস্তাবিত বিনিয়োগ গন্তব্যের ব্যবসায়িক পরিবেশ সংক্রান্ত প্রতিবেদন, বিধিবদ্ধভাবে নির্ধারিত সময়ে অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বর্ধিত সময়ের মধ্যে রফতানি মূল্য ফেরত এসেছে মর্মে তফসিলি ব্যাংকের সনদ এবং সকল প্রকার আমদানির দায় নিষ্পত্তির সপক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সনদ জমা দিতে হবে।

 

আবেদনের প্রক্রিয়া

আবেদনকারীকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত যেকোনও ডিলার শাখার মাধ্যমে কাগজপত্র ও ফরম যথাযথভাবে পূরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বরাবর আবেদন করতে হবে।

প্রস্তাবটি বাণিজ্যিক সম্ভাবনা মূল্যায়নসহ আবেদনকারীর বিদেশে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয় অর্থ, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর অপরাপর যোগ্যতা, বৈদেশিক খাতের ব্যালেন্স অব পেমেন্টের বর্তমান অবস্থা, অত্যাসন্ন পরিবর্তন, বিনিয়োগ প্রস্তাবিত দেশের ঝুঁকি, উক্ত দেশের আইন, বিধিবিধান, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়জনিত জটিলতা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় বিবেচনাপূর্বক বাছাই কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগ একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে।

 

বাছাই কমিটি ও অনুমোদন প্রক্রিয়া

বাছাই কমিটির সভাপতি থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এ ছাড়া থাকবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন সদস্য, বাংলাদেশে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একজন নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের একজন কমিশনার, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের একজন সদস্য, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরের নিবন্ধক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা।

এই কমিটির সদস্য-সচিব থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক।

সভাপতি কমিটির সব সভায় সভাপতিত্ব করবেন। সভাপতি ন্যূনতম ৭ জন সদস্যের উপস্থিতিতে সভার কোরাম হবেন। সভাপতি এবং উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সভার সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে এবং ভোটের সমতার ক্ষেত্রে সভাপতির তৃতীয় বা নির্ণায়ক ভোট প্রদানের ক্ষমতা থাকবে।

 

বিনিয়োগ করা যাবে যেসব দেশে

যেসব দেশ থেকে মুনাফা বাংলাদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধ নেই, শুধু সেসব দেশেই বিনিয়োগ করার অনুমতি দেওয়া হবে।

যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি রয়েছে, সেসব দেশে বিনিয়োগকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এ ছাড়াও, যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় পুঁজি-বিনিয়োগ, উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণ চুক্তি আছে, সেগুলোও প্রাধান্য পাবে।

যেসব দেশের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রকের থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সেসব দেশে বিনিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করা হবে না।

প্যারিসভিত্তিক ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স যেসব দেশকে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে, সেসব দেশেও বিনিয়োগের অনুমতি মিলবে না।

একইভাবে, যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনও ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, সেখানেও বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হবে না।

 

আরও যত নিয়ম

নীতিমালা অনুযায়ী, বিদেশে বিনিয়োগের অর্থ সরাসরি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাতে হবে। তবে শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগের অর্থ সরাসরি শেয়ার হস্তান্তরকারীর অনুকূলে পাঠাতে হবে। যদি কোনও কারণে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ সম্ভব না হয়, তাহলে দেরি না করে অর্থ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ব অনুমতি ছাড়া আয়, লভ্যাংশ, মুনাফা অথবা শেয়ার বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ পুনর্বিনিয়োগ করা যাবে না।

অর্থপাচার, সন্ত্রাসী অর্থায়ন এবং ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্তৃক স্থানীয় সংস্কৃতি ও ধর্মের প্রতি অবমাননাকর আচরণ ও মন্তব্য এবং বর্ণবাদী আচরণ ও কার্যকলাপের বিষয়ে সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে শূন্য সহনশীলতার নীতি অনুসরণ করতে হবে।

বাংলাদেশি আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান ইক্যুইটি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশের বাইরের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ মালিকানা বা পরিচালনা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম এরকম সংখ্যক শেয়ারের মালিক হতে হবে। কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যেকোনও সময় বিদেশে স্থাপিত সহযোগী প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন করতে পারবে। পরিদর্শনে বাংলাদেশ সরকারের হাইকমিশন বা ক্ষেত্রমতো দূতাবাস সংশ্লিষ্ট থাকবে।

বিনিয়োগকারীদের বিদেশে স্থাপিত সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণ, বার্ষিক শেয়ার মূলধনের সংক্ষিপ্তসার এবং প্রযোজ্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত অংশীদারদের (শেয়ারহোল্ডার) তালিকা জমা দিতে হবে।

বিনিয়োগকৃত দেশের যথাযথ সরকারি কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত সহযোগী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, ব্যবস্থাপক ও ব্যবস্থাপনা প্রতিনিধির বিবরণী এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনও ধরনের পরিবর্তনের তথ্য প্রতিবছর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা দিতে হবে।

বিনিয়োগকারীদের মূল প্রতিষ্ঠান এবং সমন্বিত প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জমা দিতে হবে।

এ ছাড়াও, বিনিয়োগকারীদের তাদের ব্যবসার প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিবরণ জমা দিতে হবে, যেখানে বর্তমান এবং নতুন পণ্য, ব্যবসায়িক টার্নওভার, মুনাফার মার্জিন, উৎপাদন খরচ এবং বাজারের অংশীদারিত্ব ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করতে হবে।

নীতিমালায় বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের অন্যান্য বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া শেয়ার বিক্রি করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগের অপব্যবহার এবং সংশ্লিষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘন করা হলে এটি অর্থপাচার ও মানি লন্ডারিং অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এই অপরাধে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী, পরিচালক, প্রধান নির্বাহী এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তারা দায়ী হবেন এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এবং বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৪৭-এর সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য হবেন।

এই বিধিমালায় বাংলাদেশ ব্যাংককে সার্কুলার জারির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক জনস্বার্থে এবং বিধিমালার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সময় সময় প্রয়োজনীয় সার্কুলার বা গাইডলাইন জারি করতে পারবে।