খেলাপি ঋণ কমলো

গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ কমেছে ৬৪২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ এখন এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করেছে ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। গত জুনে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যে তথ্য দিচ্ছে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র এর চেয়ে অনেক বেশি। তিনি বলেন, খেলাপিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারে না। এজন্য অনেকে নির্বাচনের আগে নিয়মিত করেছেন। তবে ৯ শতাংশ খেলাপি ঋণ অর্থনীতির জন্য মোটেও সুখকর নয়।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, খেলাপি ঋণের বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের) হিসেবের সঙ্গে মেলে না। কারণ, আদায় না করেও অনেকেই খেলাপি থেকে মুক্ত থাকতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের সঙ্গে পুনঃতফসিল করা ঋণ ও আদালতে খেলাপি ঋণ স্থগিত করা ঋণের হিসাব আসে না। এগুলো যোগ করলে খেলাপি ঋণের অঙ্ক অনেক বেশি হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর মাস শেষে সরকারি মালিকানাধীন রাষ্ট্রায়ত্ত  বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ তিন হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৫ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৭০ শতাংশ খেলাপি হয়ে আছে।

বেসরকারি ব্যাংকে এই সময়ে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৮১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ০৪ শতাংশ।

বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ ৬৪ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা; যার মধ্যে ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ০৭ শতাংশ খেলাপি এবং বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকগুলোর ৩৯ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ১২ দশমিক ১০ শতাংশ বা ৪ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসেবে চলতি বছরের জুন-সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ কমেছে ৬৪২ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে অনেকেই ঋণ পরিশোধ করেছেন। আবার প্রভাব খাটিয়ে অনেকে ঋণ নিয়মিত করেছে । এর ফলে আগের প্রান্তিকের তুলনায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে  ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে (মার্চ ২৩ থেকে সেপ্টেম্বর) খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২৩  হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। ৯ মাসে (জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর) ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৪ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। আর এক বছরের (সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৩) ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত  মার্চে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষে ছিল এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে ঋণ পরিশোধে পুরোপুরি ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন গ্রাহককে ঋণ শোধ না করেও ঋণখেলাপি থেকে মুক্ত রাখার সুযোগ করে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি। কম সুদে ঋণ নেওয়া ও ঋণ পরিশোধে কিছুটা ছাড় ছিল ২০২২ সালেও। চলতি বছরও ঋণের কিস্তির অর্ধেক পরিশোধে রয়েছে বিশেষ ছাড়। তবে এ সুযোগ ছিল গত জুন পর্যন্ত। এমন সব সুযোগের পরও ব্যাংকের টাকা ফেরত দিচ্ছে না গ্রাহক। যার কারণে নানা উদ্যোগ নিয়েও খেলাপি ঋণ কমাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এদিকে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি খাতে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে।