ইইউ’র চোখে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান ৫ বাধা

বাংলাদেশ-ইইউ পতাকা

বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের অন্তরায় হিসেবে প্রধান পাঁচটি বাধাকে চিহ্নিত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন(ইইউ)। ইইউর পক্ষ থেকে এ মত ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন। এদিকে এসব বাধাকে গুরুতর বলে মানতে নারাজ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ও ইইউ’র মধ্যকার ২য় বিজনেস ক্লাইমেট সংলাপ শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রাখা বক্তব্যে সাংবাদিকদের কাছে পিয়েরে মায়াদুন ও তোফায়েল আহমেদ নিজ নিজ অবস্থান ব্যক্ত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে পিয়েরে মায়াদুন বলেন, ‘ইইউ মনে করে ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধাটি হলো-  বাণিজ্যসহায়ক পরিবেশ তৈরি না হওয়া। ইইউ মনে করে, শুধু রফতানি দিয়েই মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য অর্জিত হবে না। সেইসঙ্গে প্রয়োজন বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই)।পাশাপাশি আমদানিও বাড়াতে হবে।’

মায়াদুন জানান, বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় বাধা হলো পাঁচটি বিষয়ের অভাব। বিষয় পাঁচটি হলো ১. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, ২. সহজীকরণ, ৩. সহযোগিতা, ৪. বাস্তবায়ন এবং ৫. বৈষম্য দূরীকরণ। এ বাধাগুলো দূর না হলে বৈদেশিক বিনিয়োগ হবে না।

পিয়েরে মায়াদুনের ভাষ্যের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ইইউ’র ইস্যুভিত্তিক যৌথ কমিটি রয়েছে। ওই কমিটি এসবের সমাধান করবেন। সুতরাং এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।’

২য় বিজনেস ক্লাইমেট সংলাপ সফল হয়েছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খোলামেলা আলোচনা করেছি। ২৮ দেশের  আমাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ভালো। যুক্তরাজ্য যদিও বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, সেটি এখনও কার্যকর হয়নি। তাদের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক ভালো। দেশটিতে আমরা কোটামুক্ত  ও শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছি।’  

এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের রপ্তানির ৫৫ শতাংশই ইইউতে। একমাত্র অস্ত্র ছাড়া আর সব পণ্যেই বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। এ মুহূর্তে ইইউতে রফতানির অর্থমূল্য ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা অচিরেই ২০ বিলিয়ন ডলারও ছাড়িয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকের এ বৈঠকে ফার্মাসিউটিক্যালস নিয়ে আলোচনা করেছি। সার্ভিস সেক্টরের বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও আলোচনা করেছি। আমদানি শুল্ক নিয়েও কথা বলেছি। ইইউকে আমরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি, ২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি হবে আট শতাংশেরও বেশি।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা ২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে, তখন যেন জিএসপি -প্লাস সুবিধা পাই, সে লক্ষ্যে কাজ করছি।’

এর আগে, সকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সংলাপ শুরু হয়। বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ইইউ বিজনেস কাউন্সিল যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে।

সংলাপে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তার নেতৃত্বে মোট ২৮ সদস্যের একটি দল এ সংলাপে অংশ নেন। দলে বাণিজ্যমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচীব এনবিআর চেয়ারম্যান, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান, ডব্লিউ পিও সেলের ডিজিসহ অন্যান্য পদস্থ ব্যক্তিবর্গ।

অপরপক্ষে সংলাপে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ’র রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন। দলে তিনি ছাড়া আরও ছিলেন ইইউভুক্ত নয়টি দেশের নয় রাষ্ট্রদূত ও ১৪টি বিজনেস ফোরামের প্রতিনিধিসহ মোট ৩৪ জন।

/এসআই/এইচকে/