রিজার্ভ চুরির মামলা খারিজের খবরটি ভুয়া

রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থের বড় একটি অংশ উদ্ধারে নিউ ইয়র্কের আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলা খারিজ হয়ে গেছে বলে ফিলিপাইনের সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, রিজার্ভ চুরির মামলা খারিজ হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ফিলিপাইনের পত্রিকায় প্রকাশিত খবরটি সত্য নয়।

তিনি আরও বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত ২০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটি ক্যাসিনো প্রতিষ্ঠানকে (ব্লুমবেরি রিসোর্টকর্প ও ইস্টার্ন হাইওয়ে) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন, এখনও আমাদের আইনজীবীরা আশা করছেন রিজার্ভ চুরির মামলার রায় বাংলাদেশের পক্ষেই আসবে।

বিএফআইইউ’র প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মূল অপরাধী ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি)। এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে কয়েকজন সাইবার অপরাধী বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি করে।

যদিও ফিলিপাইনের এনকোয়ারার ও ফিলস্টার পত্রিকা উল্লেখ করেছে— ‘পর্যাপ্ত এখতিয়ার নেই’ বলে তিন বছর আগে করা বাংলাদেশ ব্যাংকের এ মামলা খারিজ করে দিয়েছেন নিউ ইয়র্কের সুপ্রিম কোর্ট।

নিউ ইয়র্কের আদালত গত ৮ এপ্রিল এ রায় দেন বলে ব্লুমবেরি রিসোর্টকর্প সোমবার ফিলিপাইন স্টক এক্সচেঞ্জকে (পিএসই) অবহিত করে। সেখানে ‘পর্যাপ্ত এখতিয়ারের অভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলা বাতিল করে দিয়েছেন নিউ ইয়র্কের আদালত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এরমধ্যে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলার উদ্ধার হয়েছে। অবশিষ্ট অর্থ উদ্ধারে আইনি প্রক্রিয়া চলমান।

চুরির ঘটনার তিন বছর পর ২০১৯ সালে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি), দেশটির ক্যাসিনোসহ ১৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবং তিন চীনা নাগরিককে আসামি করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ।

অভিযোগে বলা হয়, দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আসামিরা এ অর্থ চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। অন্যদিকে মামলার বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট আদালতের এখতিয়ারের বাইরে উল্লেখ করে পাল্টা মামলা করে আরসিবিসিসহ সংশ্লিষ্টরা। তারা মামলাটি খারিজের আবেদনও করে।

বাংলাদেশের করা মামলায় পরের বছরের ২০ মার্চ রায় দেন ওই আদালত। রায়ে বলা হয়, মামলাটি টেকনিক্যাল হওয়ায় তা আদালতে বিচারের জন্য গ্রহণ করা হয়নি। তবে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট আরেকটি আদালতে মামলা দায়েরের সুযোগ রয়েছে বলে আদালত মতামত দেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতেই ২০২০ সালের ২৭ মে কাউন্টি সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি করা হয়। এ মামলায়ও বিবাদী করা হয় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের।

এ রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশেও একটি মামলা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্য-প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা ওই মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি। তবে মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এখনও আদালতে প্রতিবেদন দিতে পারেনি।