সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমিতে কৃষি আবাদ শুরু

দেশে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের খালি অংশে শুরু হয়েছে কৃষি আবাদ। নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) সিরাজগঞ্জে তাদের ৭ দশমিক ৬ মেগাওয়াট কেন্দ্রের নিচে সবজির আবাদ শুরু করেছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিজের ফেসবুক পেজে এই ছবি পোস্ট করে খবরটি জানিয়েছেন।

প্রতিমন্ত্রী লিখেছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিচে পরীক্ষামূলক কুমড়ো গাছ লাগানো হয়েছিল। সেখানে চারা হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত সবজি উৎপাদন হলে পরবর্তীতে ছায়া ফসল (শেডস ক্রপস) লাগানো হবে। এ ধরনের উদ্যোগ দক্ষিণ এশিয়াতে এই প্রথম। আমরা পরিকল্পনা করছি, দেশের সব সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের পতিত জায়গায় সবজি ও ফসল চাষ করে প্রতি ইঞ্চি অনাবাদী জমিকে খাদ্য উৎপাদনের আওতায় নিয়ে আসার।

সিরাজগঞ্জে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমিতে কৃষি আবাদ শুরু

এনডব্লিউপিজিসিএল সূত্র বলছে, সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিচে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব কিনা সে বিষয়ে কাজ দেওয়া হয় বাংলাদেশ এগ্রো ইকোলোজিক্যাল জোন লিমিটেড নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানটি গত এক বছর ধরে সিরাজঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর একটি সমীক্ষা করেছে। সেই সমীক্ষায় তারা বলছে এখানে ফসল উৎপাদন সম্ভব। তবে ছায়াযুক্ত স্থানে হয় এমন কিছু ফসল এখানে খুব ভালো হবে। চেরি টমেটো, ক্যাপসিক্যাম, স্ট্রবেরির মতো দামি ফসলও এখানে আবাদ করা সম্ভব। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে গত সপ্তাহে মিষ্টি কুমড়ার বীজ রোপণ করে প্রতিষ্ঠানটি। এখন সবগুলো বীজ ফুড়ে চারা বের হয়েছে।

জানতে চাইলে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থানা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী না রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা এজন্যই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর নিচে কৃষিকাজ করা যায় কিনা তা যাচাই বাছাই করছি। ইতোমধ্যে চারা গজানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, এটি সফল হলে আমাদের অন্য কেন্দ্রগুলোর নিচেও কৃষি কাজ শুরু করা হবে।

এক মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য তিন একর জমি প্রয়োজন হয়। এভাবে এক হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জমি প্রয়োজন তিন হাজার একর বা ৯ হাজার বিঘা। সরকারের পরিকল্পনায় ২০৩০ সাল নাগাদ অন্তত চার হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। যার জন্য ৩৬ হাজার বিঘা জমি প্রয়োজন। বিপুল এই জমি অনাবাদী রাখা নিয়ে সরকার এখন চিন্তিত। 

বাংলাদেশ এগ্রো ইকোলোজিক্যাল জোন লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন জানান, আমরা মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করেছিলাম। সবগুলো খুব সুন্দর চারা হয়েছে। আশা করছি আমরা এখানে ভালো ফলন পাবো।

এখন উন্নত দেশগুলো সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জমিতে ফসল উৎপাদন করার ওপর জোর দিচ্ছে। কারণ হিসেবে তারা বলছে এই বিপুল পরিমাণ জমি খাদ্য উৎপাদনের বাইরে রাখা যাবে না। একই জমির একাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।