হালাল পণ্যের বাজার বাড়াতে যৌথভাবে কাজ করবে এফবিসিসিআই ও আইওএফএস

আন্তর্জাতিক বাজারে হালাল পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে হালাল পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ জোরদারে ইসলামিক অর্গানাইজেশন ফর ফুড সিকিউরিটির (আইওএফএস) সহযোগিতা চাচ্ছে দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই। পাশাপাশি হালাল পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ ও বৈশ্বিক হালাল পণ্যের বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব বাড়াতে এফবিসিসিআই এবং আইওএফএস  একসঙ্গে কাজ করবে।

সোমবার (২১ আগস্ট) আইওএফএস ও এবং এফবিসিসিআই’র মধ্যে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় উভয় সংস্থার পক্ষ থেকে এই আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, মুসলিম এবং অমুসলিম উভয় দেশগুলোতেই ক্রমেই হালাল পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই বাজারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মুসলিম দেশগুলোর জোট অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) সদস্য দেশগুলো থেকে আসে। ২০২০ সালে হালাল পণ্যের বৈশ্বিক আকার ছিল ৩ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৮৪৩ মিলিয়ন ডলার মূল্যের হালাল পণ্য রফতানি করা হয়। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ হালাল পণ্য গেছে মুসলিম দেশগুলোতে।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, স্থানীয় উৎপাদনকারী এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে হালাল সার্টিফিকেট প্রদানের লক্ষ্যে ২০০৭ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে হালাল সার্টিফিকেশন বিভাগ চালু করেছে সরকার। কিন্তু হালাল সার্টিফিকেশনের ক্ষেত্রে এখনও অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। হালাল পণ্যের বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি এবং হালাল সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া সহজ করতে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর সহযোগিতা চান তিনি।

মাহবুবুল আলম উল্লেখ করেন, সরকারের দূরদর্শী নেতৃত্ব দেশের কৃষি খাতে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ফলে উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২২টি কৃষি পণ্য উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে সরবরাহ ব্যবস্থা এবং কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের অপর্যাপ্ততার কারণে সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, দেশের বিদ্যমান কৃষি অবকাঠামো এবং কোল্ড চেইন ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান তিনি।

বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনের বৈপ্লবিক সাফল্যের প্রশংসা করেন আইওএফএস -এর মহাপরিচালক অধ্যাপক ইয়ারলান বাইদুলেট। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো সদস্য দেশ পেয়ে আমরা (আইএফপিএ) খুবই গর্বিত। আমরা কৃষি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে এখানকার বেসরকারি খাতের সঙ্গে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে আগ্রহী।

বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের বাজারের বিপুল সম্ভাবনার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, এই বাজারের বড় অংশই অমুসলিম দেশগুলোর দখলে। মুসলিম দেশগুলোতে হালাল পণ্যের বাজার ধরতে পণ্য সরবরাহ জোরদারে বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্যে এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে জনসংখ্যা হবে প্রায় ১০ বিলিয়ন। সে সময় বাংলাদেশের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটিতে। অতএব, বাড়তি এই মানুষদের জন্য আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বিপুল বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রয়োজন।

ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফুড প্রসেসিং অ্যাসোসিয়েশন (আইএফপিএ) এবং এফবিসিসিআই’র মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়েছে। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে  চুক্তিতে সই করেন এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাহবুবুল আলম এবং আইওএফএসের মহাপরিচালক ইয়ারলান বাইদুলেট। চুক্তির অধীনে আইএফপিএ-এর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পাশাপাশি বেশকিছু পরিষেবা পাবে এফবিসিসিআই। এর মধ্যে রয়েছে আইএফপিএ-এর বিভিন্ন প্রকাশনায় অংশগ্রহণ, আইএফপিএ আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ, ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর বেসরকারি খাতের সঙ্গে ব্যবসায়ী পর্যায়ে (বিটুবি) সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন প্রভৃতি।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি খায়রুল হুদা চপল, ড. যশোদা জীবন দেবনাথ, রাশেদুল হোসেন চৌধুরী রনি, মো. মুনির হোসেনসহ  ব্যবসায়ী নেতারা।