ইসবগুল কেন কেজিতে বাড়লো ৮০০ টাকা

রমজানকে কেন্দ্র করে লাগামহীন বেড়ে চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। সংকট না থাকলেও অযথা দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এবার শরবত তৈরির উপকরণ ইসবগুলের ভুসিতে কেজিপ্রতি দাম বাড়ানো হয়েছে ৮০০ টাকা। ইসবগুলের ভুসি ছাড়াও ইফতার তৈরিতে ব্যবহৃত প্রায় সব পণ্যের দামই বেড়েছে।

রমজান এলে চাহিদা বাড়ে ইসবগুল ভুসির। ইফতারে এই শরবত খেতে পছন্দ করেন রোজাদাররা। স্বাস্থ্যগত দিক দিয়েও এটি অনেক উপকারী। তবে এবার রোজার আগেই দাম বেড়েছে এই পণ্যটির। গত ৩ মাসের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে ইসবগুলের ভুসির দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা অজুহাত দিচ্ছেন—আমদানি খরচ ও ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধি, ডলারের সংকট।

সোমবার (১১ মার্চ) বিকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার পাইকারি ও খুচরা  বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে পাইকারিতে প্রতিকেজি ইসবগুলের ভুসি মানভেদে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ৬ মাস আগে ছিল ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ইসবগুলের ভুসি ১৮০০ থেকে ২৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ৬ মাস আগে ছিল ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

এদিকে প্যাকেটজাত ইসবগুলের ভুসি আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরেজমিন পুরান ঢাকার ছোট-বড় দোকানগুলোতে দেখা যায়—সজিব গ্রুপের ২০ গ্রাম ইসবগুলের ভুসি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। সেই হিসাবে এক কেজি ভুসির দাম পড়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা।

এক নম্বর খোলা ইসবগুলের ভুসি ২ হাজার ৪০০ টাকা এবং একটু কম মানসম্পন্ন প্রতি কেজি ভুসি ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছেন বলে জানান কলতাবাজারের মুদি ব্যবসায়ী মো. মেহেদী। দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে এই বিক্রেতা বলেন, আমরা তো পাইকারি বাজার থেকে কিনে আনি। দাম বাড়ার কারণ জানি না। যতদূর শুনেছি, সরকার নাকি ভ্যাট বাড়িয়েছে। এ জন্য দাম বেশি।

মেহেদী বলেন, আমরা পাইকারি যে দামে কিনি, তার চেয়ে সামান্য কিছু লাভে বিক্রি করি। তবে কত টাকা পাইকারি দরে কিনেছেন, সেই তালিকা দেখাতে রাজি হননি তিনি।

 


ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, ইসবগুলের ভুসি পুরোটাই আমদানি-নির্ভরপুরান ঢাকার পাইকারি বিক্রেতা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ইসবগুলের ভুসির ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স দ্বিগুণ করা হয়েছে। তাই দাম বেড়েছে। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী, সরবরাহ না থাকায় ইসবগুলের ভুসির দাম বেড়েছে।’ তিনি জানান, এই পণ্যটি ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। ডলার সংকটে আগের মতো আমদানি না থাকায়, সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তার ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়িয়েছে সরকার। তাই দাম বেড়েছে।

এদিকে ক্রেতারা বলছেন, রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো এখন নিত্য ব্যাপার হয়ে গেছে। বিক্রেতারা রমজানের দুই-তিন মাস আগেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। যাতে কেউ বলতে না পারে রমজানের কারণে দাম বেড়েছে।

রিফাত হোসেন নামে একজন ক্রেতা বলেন, ‘রমজান মাস এলে ইসবগুলের ভুসির চাহিদা একটু বাড়ে। সবসময় তো আর কেনা হয় না। অল্পস্বল্প করে কেনা হয়। তাই দাম বাড়ার বিষয়টি কারও নজরে পড়ে না। কিন্তু কেজিতে কিনতে গেলে বোঝা যায় দাম কত বেড়েছে। শুধু ইসবগুলের ভুসিই না, বাজারে প্রতিটি জিনিসের দাম বেশি। কিন্তু সরকার কিছু করতে পারছে না।’

এই ক্রেতা আরও বলেন, ‘একসময় ব্যবসায়ীরা রমজানের আগমুহূর্তে দাম বাড়াতেন। এটি নিয়ে সবাই সরব হতো। তাই এখন তারা রমজানের ২-৩ মাস আগেই জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। আর রমজান এলে দু-এক টাকা আবার কমিয়ে দেয়। যাতে কেউ বলতে না পারে দাম বেড়েছে। এটা ব্যবসায়ীদের নতুন কৌশল।’

সোমা নামের একজন গৃহিণী বলেন, ‘আমার বাসায় সবাই নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খায়। দুই মাস আগেও ১৫০০ টাকা কেজি হিসাবে আধা কেজি ইসবগুলের ভুসি কিনেছিলাম। কাল (মঙ্গলবার) প্রথম রোজা। তাই আজকে কিনতে এলাম। দোকানি এক কেজি ইসবগুলের ভুসির দামে চাচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকা। আমরা সাধারণ মানুষ যে কীভাবে চলছি, সেটা শুধু আমরাই জানি। এক কেজির জায়গায় এখন ২৫০ গ্রাম কিনছি। তারপরও কষ্ট হয়ে গেছে।’