‘এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমদানি-রফতানি নীতিমালার পুনঃমূল্যায়ন জরুরি’

বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের বিদ্যমান আমদানি-রফতানি নীতিমালার পুনঃমূল্যায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

শনিবার (২৪ মে) ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি নীতিমালা: এলডিসি পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয়তা এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

তাসকীন আহমেদ বলেন, দীর্ঘমেয়াদি মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকট, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কারোপ, রফতানিতে ভারতের বিধিনিষেধ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতার ফলে শিল্প খাতের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এসব বাস্তবতায় নীতিমালা পুনর্বিন্যাসের বিকল্প নেই।

প্রধান অতিথি হিসেবে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, এনবিআর সদস্য (কাস্টমস) কাজী মোস্তাফিজুর রহমান এবং ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, তৈরি পোশাক খাত দেশের মোট রফতানির ৮৪ শতাংশ হলেও চামড়া, পাট, ওষুধ এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যে প্রত্যাশিত রফতানি অর্জিত হয়নি। তিনি বন্দর অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা সম্প্রসারণ, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) উদ্যোগ জোরদার এবং একটি সমন্বিত বাণিজ্য নীতি প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের কোনও দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ নেই— এটা হতাশাজনক। সরকারি সংস্থাগুলোর কাঠামোগত সংস্কার এবং সমন্বয় বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।’ 

বেসরকারি খাতকে দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি আখ্যা দিয়ে তাদের যৌক্তিক দাবি সরকারকে সঠিকভাবে উপস্থাপনের আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণ করতেই হবে। এ প্রেক্ষাপটে তৈরি পোশাক, ওষুধ ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে মনোযোগ বাড়াতে হবে।’ তিনি দ্রুত একটি জাতীয় ডায়ালগ আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেন।

কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের রফতানি একমাত্র খাত নির্ভর হওয়ায় আন্তর্জাতিক দর কষাকষিতে পিছিয়ে পড়ি।’ জুলাইয়ের মধ্যে সেন্ট্রাল বন্ডেড ওয়্যারহাউস চালুর আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং ইলেকট্রনিক ডেটা এক্সচেঞ্জ সিস্টেম চালুর উদ্যোগের কথা জানান তিনি।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নগদ প্রণোদনার চেয়ে কার্যকর নীতিসহায়তা গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি ম্যান-মেইড ফাইবারে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং বলেন, ‘সঠিক অবকাঠামো ও সহায়তা নিশ্চিত হলে তৈরি পোশাক খাত থেকে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।’

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখনও আমদানি কর ও পরোক্ষ করের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীল। শুল্ক কাঠামো প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বেশি এবং বাণিজ্য নীতিতে জটিলতা রয়েছে।’ তিনি একটি সমন্বিত বাণিজ্য কাঠামো ও অংশীজনের অংশগ্রহণে নীতি পুনর্গঠনের সুপারিশ করেন।