এসএমই ফাউন্ডেশনের ১৪০ প্রস্তাবের ৪১টি বাজেটে গৃহীত

প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে উপস্থাপিত ১৪০টি সুপারিশের মধ্যে ৪১টি প্রস্তাব গ্রহণ করায় সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে তারা।

সোমবার (২৩ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, এসএমই ফাউন্ডেশন মনে করে, এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের ফলে উদ্যোক্তারা বিশেষভাবে উপকৃত হবেন এবং দেশে কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বাড়বে। এ লক্ষ্যে ফাউন্ডেশন বাজেটে ঘোষিত এক হাজার কোটি টাকার ঋণ বরাদ্দ তাদের অনুকূলে প্রদানের জোর দাবি জানিয়েছে, যাতে এই অর্থ কার্যকরভাবে প্রান্তিক নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছানো যায়।

অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতার ৭৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রান্তিক পর্যায়ের ১০ হাজার উদ্যোক্তাকে এই বরাদ্দের আওতায় ঋণ দেওয়া হবে। একইসঙ্গে আগামী তিন বছরে ১৫ হাজার নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, ২৫ হাজার উদ্যোক্তাকে দক্ষতা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান, বিভাগীয় শহরে ডিসপ্লে ও সেলস সেন্টার স্থাপন, জেলা শহরগুলোতে আঞ্চলিক এসএমই মেলা আয়োজন এবং কেন্দ্রীয় সিএমএসএমই ডাটাবেজ গঠনের কথা বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে।

এসব কর্মসূচি ইতোমধ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে ফাউন্ডেশন।

এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবারের বাজেটে যেসব প্রস্তাব আংশিক বা পূর্ণাঙ্গভাবে গৃহীত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

১. আবগারি শুল্ক অব্যাহতি: ব্যাংক হিসাবের সর্বোচ্চ ব্যালেন্স একলাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে এসএমইদের জন্য ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে (প্রস্তাব ছিল ৫ লাখ টাকা)।

২. কৃষি পণ্যের উৎসে কর হ্রাস: প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে বিভিন্ন কৃষিপণ্য কেনার ক্ষেত্রে বার্ষিক সরবরাহ মূল্য ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ১ শতাংশ উৎসে করের পরিবর্তে ০.৫ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে।

৩. রিসাইকেল ইন্ডাস্ট্রি কর হ্রাস: ভাঙারি সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে।

৪. উৎসে কর জমার সময়সীমা শিথিল: প্রতি মাসের পরিবর্তে উৎসে কর সংক্রান্ত রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়সীমা কোয়ার্টার ভিত্তিক করা হয়েছে।

৫. আমদানি পর্যায়ে মিনিমাম ভ্যালু বৃদ্ধি: দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় প্লাস্টিক টয় ও কসমেটিকসসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি মূল্য নির্ধারণের নিম্নসীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার ফল

২০১১-১২ অর্থবছর থেকে চলতি বাজেট পর্যন্ত এসএমই ফাউন্ডেশন মোট ৫৫৭টি সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে ৮৫টি বিভিন্ন অর্থবছরের বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে। এবারের বাজেটে ১৪০টি সুপারিশের মধ্যে ৪১টি গৃহীত হওয়া আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।

প্রসঙ্গত, করোনা মহামারির সময় সরকার প্রদত্ত ৩০০ কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল সফলভাবে বিতরণ করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। ওই অর্থে গঠিত রিভলভিং তহবিল থেকে বর্তমানে তৃতীয় দফার ঋণ বিতরণ চলছে।

জাতীয় অর্থনীতিতে এসএমই খাতের ভূমিকা

বাংলাদেশের শিল্প খাতের প্রায় ৯৯ শতাংশই কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৭৮ লাখেরও বেশি এমএসএমই রয়েছে, যা শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের ৮৫ শতাংশ এবং জিডিপির প্রায় ৩২ শতাংশ অবদান রাখে।

ফাউন্ডেশন মনে করে, শ্রমনিবিড় ও স্বল্প পুঁজিনির্ভর এই খাতকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির লক্ষ্য অর্জনে সিএমএসএমই খাতের বিকাশ অনিবার্য।