পাওয়ার সেল থেকে বলা হচ্ছে মিরপুর, বসুন্ধরা, আর হাতিরঝিলে হবে এই আলোক উৎসব। অন্যদিকে পিডিবি বলছে বাকি দুটো স্থান ঠিক থাকলেও মিরপুরের বদলে সদরঘাটে হতে পারে সম্ভাব্য আলোক উৎসব।
বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, দেশের ১২৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ১৭ হাজার ৪৩ মেগাওয়াট। এরসঙ্গে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো থেকে আরও ২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে প্রায় ২৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সে হিসেবে মোট উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়ায় ২০ হাজার ১৩৩ মেগাওয়াট। এছাড়া আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে আসছে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ১৬ হাজার ৫৬২ মেগাওয়াট হলেও বাস্তবে সরবরাহ করা যায় গড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এই অবস্থায় দেশে বর্তমানে গড়ে সাড়ে ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সরবরাহ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট যা বর্তমানে ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। মাত্র ১০ বছরে এই অগ্রগতি নিঃসন্দেহে একটি বিরল অর্জন। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহে আলোক উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে এটিকে স্মরণীয় করা হবে।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ ২০১৮। ‘অনির্বাণ আগামী’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত এই সপ্তাহের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় আজ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পযন্ত এই অনুষ্ঠান চলবে। এ উপলক্ষে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি।
জানা যায়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদেশ থেকে প্রায় ২০ জন অতিথি উপস্থিত থাকবেন। এরমধ্যে নেপালের জ্বালানি, পানি সম্পদ ও সেচমন্ত্রী, ভুটানের ডিপার্টমেন্ট অব হাইড্রো পাওয়ার সিস্টেমের ডিজিসহ বিভিন্ন দেশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ জানায়, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য তিন দিন নানা আয়োজনে এই সপ্তাহ পালন করা হবে। প্রতিবারের মতো এবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহে থাকবে মেলা, ক্যাম্প ও সেমিনার। মেলায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি প্রাধান্য পাবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ মেলায় অংশ নেবে। বেসরকারি পর্যায়ের প্রায় ৭০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নেবে। তিনদিনে ৪টি সেমিনারের আয়োজন করা হবে। সেমিনারে দেশি বিদেশি বিশেষজ্ঞরা অংশ নেবেন বলে বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়। প্রথমদিন অর্থাৎ ৬ সেপ্টেম্বর ফিউচার প্রসপেক্টাস অব রিজিওনাল কানেকটিভিটি শীর্ষক, দ্বিতীয়দিন পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি: ফান্ডিং দ্য ওয়ে টু সাসটেইনেবল গ্রোথ এবং নিউজ টেকনোলজিস: ইনোভেশনস ইন পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি শীর্ষক দুইটি এবং শেষ দিন অর্থাৎ ৮ সেপ্টেম্বর এনার্জি প্রাইসিং নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ জানায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো জ্বালানি খাতে কাজের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করা। এজন্য সেরা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পুরস্কার দেওয়া, স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ে বক্তৃতা প্রতিযোগিতা আয়োজন, গঠনমূলক সমালোচনা ও সেরা প্রতিবেদন তৈরির জন্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মীদের পুরস্কার দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীদের উদ্ভাবনী গবেষণামূলক কাজে উদ্বুদ্ধকরণ এবং সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারিখাতের গুরুত্বপুর্ণ অবদানের জন্য সম্মাননা দিচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ। এছাড়া উৎসাহ দিতে ও সচেতনতা বাড়াতে সেরা আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প গ্রাহকদেরও পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিকল্প জ্বালানির অনুসন্ধান, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি দক্ষতা ও জ্বালানি সাশ্রয় ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ৪৬৯টি উপজেলা, ৬৪টি জেলা ও ৮ বিভাগ ও ৮ মহানগর পর্যায়ে বিষয়ভিত্তিক বক্তৃতারও আয়োজন করা হয়েছিল। বক্তৃতার বিজয়ীদেরও এই অনুষ্ঠানে পুরস্কার দেওয়া হবে।