লোহার খনির অর্থনৈতিক উপযোগিতা জানতে লাগবে আরও একমাস

লোহার খনির সম্ভাব্যতা যাচাই হচ্ছে হিলিতে (ফাইল ছবি)দিনাজপুরের হিলির লোহার খনি জরিপের ফল বিশ্লেষণ চলছে। একমাসের মধ্যেই নিশ্চিত হওয়া যাবে খনি থেকে আকরিক আহরণ আর্থিকভাবে লাভজনক কিনা। ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর (জিএসবি) ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
জিএসবির শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এখন খননের সময় পাওয়া নমুনাগুলো পরীক্ষা করছি। জিএসবি নিজেদের গবেষণাগারেই সেই পরীক্ষা চালাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, একমাসের মধ্যেই সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলে বলা যাবে, এই খনির লোহা উত্তোলন লাভজনক হবে কিনা।’
তবে, আশঙ্কার কথা জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের এখানে পরীক্ষার সব যন্ত্রপাতি রয়েছে। কিন্তু সবসময় এগুলোর ব্যবহার হয় না। ব্যবহার না হওয়ার কারণে যন্ত্রগুলোয় ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এখানে এমন যন্ত্র রয়েছে, যার প্রকৃত মূল্য এক কোটি টাকা কিন্তু এর ত্রুটি সারাতেই ৮০ লাখ টাকা লাগে। আমরা আশঙ্কা করছি আবার এই ধরনের কোনও ঘটনা না ঘটে।’

সূত্র বলছে, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়ার মতো হাতেগোনা কয়েকটি দেশে লোহার খনি রয়েছে। এটি মূল্যবান হওয়ায় সরকার নিজেই এই সম্ভাব্য খনির অনুসন্ধান পর্যায়ের সব কাজ করতে চায়।

সম্প্রতি জিএসবি বলেছে, ভূগর্ভের এক হাজার ৩০০ ফুট থেকে ১ হাজার ৬৫০ ফুটের মধ্যে লোহার একটি স্তর পাওয়া গেছে। খনিটির আয়তন হতে পারে ১০ বর্গকিলোমিটার। তবে ১০ বর্গ কিলোমিটার খনি নিশ্চিত হতে গেলে আরও কয়েকটি অনুসন্ধান কূপখনন করতে হবে। জিএসবির পরীক্ষার পর সেই প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে বলে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে যেসব নমুনা পেয়েছি, তা বিশ্লেষণ চলছে। এই প্রক্রিয়ায় যদি মনে হয় লোহা পাওয়া যাবে, তাহলে আরও কূপখনন করে খনিটির বিষয়ে নিশ্চিত হতে চায় সরকার। যে কোনও ভূগর্ভস্থ সম্পদের ক্ষেত্রেই একই কাজ করতে হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এক্ষেত্রেও তাই করা হবে।’

প্রথমবার ওই এলাকা থেকে যে নমুনা তোলা হয়, তা পরীক্ষা করে ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জি (বিসিএসআইআর)। তখন দেখা যায়, আকরিকের লোহার পরিমাণ প্রায় ৬০ ভাগ কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা ৭০ ভাগ।

নমুনা পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের কাছে যেসব নমুনা দেওয়া হয়েছিল সেখানে দেখা গেছে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ পযন্ত আয়রন অক্সাইড রয়েছে।’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণত ৫০ ভাগ আয়রন অক্সাইড থাকলেই সেখান থেকে লোহা আহরন করা যায়। কিন্তু আমরা নমুনায় আরও বেশি পরিমান আয়রন অক্সাইড পেয়েছি। এখন দেখতে হবে এর ব্যাপ্তি কত এলাকা জুড়ে রয়েছে। এজন্য আরও কূপখনন করতে হবে।’

প্রদীপ কুমার বিশ্বাস জানান, ‘এর আগেও দিনাজপুরের একটি নদী থেকে আনা নমুনায় ৫০ ভাগ আয়রন অক্সাইড পাওয়া গিয়েছিল।’

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে হাকিমপুর উপজেলার মুর্শিদপুর গ্রামে খনিজসম্পদ অনুসন্ধানে জরিপ কার্যক্রম চালায় বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর (জিএসবি), সেখানে লোহার আকরিকের সন্ধান পায় অনুসন্ধানকারী দল, যা বাংলাদেশে প্রথম ছিল। এর ওপর ভিত্তি করেই দ্বিতীয় পর্যায়ে ইশবপুরে জরিপ কার্যক্রম চালাচ্ছে অনুসন্ধানকারী দল। যা শুরু হয় গত এপ্রিলে।

বলা হচ্ছে যে, কোনও খনি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক কিনা. তা জানতে ভূ-অভ্যন্তরে সম্পদের উপস্থিতিকে খনির বিস্তৃতি দিয়ে গুণ করা হয়। কোথাও ভূ-অভ্যন্তরে সম্পদ থাকার পরও বিস্তৃতি কম হলে সেই খনিকে লাভজনক বলা যায় না। খনি থেকে আহরিত সম্পদের তুলনায় তখনকার বাজারে ওই সম্পদের মূল্যমান কম হলেও খনি লাভজনক হয় না।

এরআগে উত্তরে চুনা পাথরের খনি পায় জিএসবি তবে ওই খনিকে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ঘোষণা করতে পারেনি জিএসবি।