পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন চালু হচ্ছে আজ

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র ( ফাইল ছবি)এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের  সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর)। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় লাইনটিতে বিদ্যুৎ-সংযোগ দিয়ে পরীক্ষা করা হবে। এরপর বিভিন্ন ভোল্টেজ লেভেলে তিন ঘণ্টা লাইনটিতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হবে। এরপর  বিকেল তিনটা নাগাদ পায়রা-গোপালগঞ্জ সঞ্চালন লাইনটি বিদ্যুৎ সঞ্চালনের উপযুক্ত বলে ঘোষণা করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। সব ঠিকঠাক থাকলে ২০২০ সালের জানুয়ারির শেষের দিকে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে।

দেশের সবচেয়ে বড় এই তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পটুয়াখালীতে নির্মাণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রায়াত্ত নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) ও চীনের ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) যৌথভাবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করে। এনডব্লিউপিজিসিএল এবং সিএমসি যৌথভাবে কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল) গঠন করা হয়। চীনের এক্সিম ব্যাংকের   ১৬ হাজার কোটি টাকা আর্থিক সহায়তায় কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। কেন্দ্রের সমান মালিকানা রয়েছে বাংলাদেশ ও চীনের হাতে। গত জুনে কেন্দ্রটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে আসার সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু  বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি পিজিসিবি। এ কারণে কেন্দ্রটির উৎপাদন শুরুর সময় কয়েক মাস পিছিয়ে যায়।

সঞ্চালন লাইন নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক পিজিসিবির প্রধান প্রকৌশলী শফিকুর রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে লাইনের পরীক্ষা শুরু হবে। আশা করছি, তিন ঘণ্টার এই পরীক্ষা শেষ হবে বিকেল তিনটা নাগাদ। এরপরই ৪০০ কেভিসম্পন্ন ১৬২ কিলোমিটারের লম্বা এই লাইনটিকে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের উপযুক্ত বলে ঘোষণা করা হবে।’

বিসিপিসিএল সূত্র বলছে, সঞ্চালন লাইন পেলে তিন ধাপে বিদ্যুৎকেন্দ্রর পরীক্ষার কাজ শুরু হবে। কিছু যন্ত্রাংশ রয়েছে, সেগুলো পরীক্ষার জন্য ৪০০ কেভি লাইনের প্রয়োজন। তিন ধাপে পরীক্ষার প্রথম ধাপে লার্জ ইকুইপমেন্ট (বড় যন্ত্রাংশ) টেস্টিং করা হবে। এরপর পারফরমেন্স টেস্ট (কর্মদক্ষতা পরীক্ষা) করা হবে। সব শেষ ধাপ হিসেবে রিলায়েবেলিটি রান (নির্ভরশীল পরীক্ষণ পরীক্ষা) করা হবে।এরপর কেন্দ্রটি উৎপাদন শুরুর ঘোষণা দেওয়া হবে।

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই প্রাথমিক উৎপাদন শুরুর তারিখ নির্ধারণ করা হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিট আগামী মে মাসে উৎপাদন শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় ইউনিট চালুর দিন থেকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক গোলাম মাওলা বলেন, ‘পিজিসিবি লাইন নির্মাণের কাজ শেষ করেছে। আশা করি, ১৫ অথবা ১৮ জানুয়ারি কেন্দ্রটি গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারবো। এরপর থেকে কেন্দ্রটিকে বিভিন্ন ক্ষমতায় পরীক্ষা শুরু হবে। পারফরমেন্স টেস্ট শুরু হলে প্রাথমিক উৎপাদন শুরুর তারিখ পর্যন্ত পরীক্ষার জন্য দেড় মাস সময় দরকার।’

উল্লেখ্য, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করা হয়েছে। কেন্দ্রটি উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সময়ও চেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্রের আবাসন প্রকল্প উদ্বোধনের সময় পায়রায় যান। প্রকল্প নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্রটির উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান (বিসিপিসিএল)।