শিল্পে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট: সমাধানের সুপারিশ আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ

01baa285a261aabb9b8c792707567100-5dc2f3e1073d7

শিল্পের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা সমাধানে ছয় মাস আগে সরকার একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছিল। কথা ছিল কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করে শিল্পের সব সংকট দূর করে এক বছরের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। কিন্তু বিগত ছয় মাসে কমিটির করা একটি সুপারিশ ছাড়া বাকিগুলো আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরাতন শিল্পগুলো গ্যাস সরবরাহ নিয়ে ক্যাপটিভ জেনারেটরের মাধ্যমে নিজস্ব উৎপাদনে চলছে। অন্যদিকে সরকার নতুন শিল্পের জন্যও ক্যাপটিভে গ্যাস সংযোগের নিয়ম সহজ করেছে। অন্যদিকে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না পাওয়াতে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নিতে চাইছেন না শিল্প মালিকরা। এতে শিল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধি না পাওয়ায় অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তবে যেকোনও প্রকারে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিতের বিষয়ে আশ্বস্ত করছে সরকার।

নভেম্বরে কমিটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ২৪ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ ও নির্দিষ্ট এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ ৮ দফা সুপারিশ করে। পেট্রোবাংলার তরফ থেকে প্রথম সুপারিশটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, চাহিদার ভিত্তিতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ চলমান রাখা। এখন শিল্পে ১৬ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রাক-অনুমতিসহ (ছাড়পত্র) টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস শিল্পপ্রতিষ্ঠানে স্থাপন হতে যাওয়া ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টে গ্যাস সংযোগ দিতে হবে। এছাড়া শিল্পপ্রতিষ্ঠানে জ্বালানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার করার ওপরও জোর দিয়েছে কমিটি।

কমিটি সুপারিশ করেছিল, আগামী দুই বছরের জন্য ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর জ্বালানি দক্ষতা ন্যূনতম ৩০ ভাগ এবং পরবর্তী সময়ে ন্যূনতম ৩৫ ভাগ নির্ধারণ ও ৬০ ভাগ বা তারচেয়ে বেশি জ্বালানি দক্ষতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দিতে হবে।

এছাড়া, সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ইলেক্ট্রনিক গ্যাস ভলিউম ক্যারেক্টর (ইভিসি) মিটার চালু করা, শিল্পপ্রতিষ্ঠানে জ্বালানি সাশ্রয়ী বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি স্থাপন ও ব্যবহারে উৎসাহ প্রণোদনা দেওয়া, শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নেট মিটারিং সিস্টেম স্থাপন ও ব্যবহারে প্রণোদনা দেওয়ারও সুপারিশ করেছিল কমিটি।

এসব সুপারিশ কতটা বাস্তবায়ন হলো সে বিষয়ে সরকার গঠিত কমিটির প্রধান ইপিআরসি চেয়ারম্যান সুবীর কিশোর চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের একটি সুপারিশ ছিল বিদ্যুৎ বিভাগের প্রাক-অনুমতিসহ (ছাড়পত্র) টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস শিল্পপ্রতিষ্ঠানে স্থাপিতব্য ক্যাপটিভ পাওয়ারপ্ল্যান্টে গ্যাস সংযোগ দিতে হবে। এ সুপারিশের পর বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আর তাতে বলা হয়, ১০ মেগাওয়াটের ওপরে হলে প্রাক অনুমতি লাগবে, তবে এর নিচে হলে লাগবে না।

জ্বালানি সাশ্রয়ের বিষয়ে তিনি জানান, আমাদের স্রেডা (টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে। কিন্তু তার আগে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সচেতন করতে হবে। এ বিষয়ে বিটিএমএ-সহ বেশ কিছু অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। তারা জানিয়েছেন, নিজেরা বসে সচেতন করার কাজটি করতে চায়। এজন্য প্রয়োজনে তারা প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করবে।

তিনি বলেন, প্রণোদনার বিষয়ে আবারও আলোচনা হয়েছে। কারণ, আগে একটি স্ট্যান্ডার্ডের মধ্যে আনতে হবে, এরপর তা পলিসির মধ্যে আনা হবে। এটি একটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। নীতিগুলোর সঙ্গে অন্য মন্ত্রণালয়ও যুক্ত হতে পারে। ফলে তাদের মতামতও নিতে হবে।

সুবীর কিশোর বলেন, নেট মিটারিংয়ের কাজ বিতরণ কোম্পানিগুলো অনেকেই করছে। সংযোগও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই লাইনগুলো পুরো চালু হয়নি। অন্যদিকে ইভিসি মিটারের ক্ষেত্রে তিতাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা অনেক জায়গায় সংযোগ দিয়েছে কিন্তু সেগুলো চালু হয়নি। আর তিতাসের এমডি নতুন হওয়ায় তিনি আরও কিছু সময় চেয়েছেন।

তিনি আরও জানান, আমরা তিন মাস পর পর বৈঠক করছি। গত মাসে বৈঠক করেছি। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী আমাদের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। খুব শিগগিরই আমরা আবার বৈঠক করবো বলে আশা করছি।

শিল্পে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সমস্যা সমাধানে গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল (ইপিআরসি)-এর চেয়ারম্যান সুবীর কিশোর চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে ২০ সদস্যের একটি স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়।

এদিকে ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, শিল্প গ্রাহকদের আমরা ক্যাপটিভ ব্যবহার না করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে কাজ করছি। শিল্প এলাকাগুলোতে বিশেষ করে শীতলক্ষ্যা পাড়ে নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আরও কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, নেট মিটারিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা কাজ করছি। বিশেষ করে বড় শিল্প গ্রাহকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করারও পরামর্শ দিচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহিদ সারওয়ার বলেন, ‍ক্যাপটিভের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ আমাদের বলেছে যে, ডাবল লাইন রাখতে, একদিকে ক্যাপটিভ, অন্যদিকে লাইনের বিদ্যুৎ। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে কাজ করা হচ্ছে। আর শিল্প এলাকার মধ্যে, বিশেষ করে টঙ্গী এলাকায় কাজ করছি আমরা।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সচেতনতা বাড়াতে লিফলেট দেওয়া হচ্ছে। গ্রাহকদের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে, বলে জানান তিনি।