সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘প্রত্যাশিত বেসরকারি বিনিয়োগ না হওয়ায়, সরকারি বড় প্রকল্পগুলো ঠিক সময়ে শেষ না হওয়া এবং বেসরকারি বিনিয়োগের সহায়ক সরকারি প্রকল্প যেখানে বিদ্যুতের চাহিদা সৃষ্টি হবে, সেটিও নির্দিষ্ট সময়ে না হওয়ার কারণে বিদ্যুতের চাহিদার সৃষ্টি হয়নি। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেশি হয়ে গেছে। এদিকে, চাহিদার যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল, সেটিও অনেক বেশি। সরকার বলেছিল, তারা অন্যান্য দেশের মতো ২৫ শতাংশ পর্যন্ত রিজার্ভ বিদ্যুৎ রাখতে চায়। কিন্তু এখন সেটি ৩৮ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের মতো দেশের জন্য ১৬ শতাংশ পর্যন্ত রিজার্ভ থাকলেই চলে।’
তিনি বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে বর্তমানে সরকার যে স্রেডা (টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) গঠন করেছে তা যথেষ্ট নয়। আরও শক্তিশালী কাঠামো দরকার হবে। স্রেডা যেন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২২টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এসব প্রকল্প থেকে ২৩ হাজার ২৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা ছিল। এগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এ গুলোতে নতুন করে বিনিয়োগে যাওয়া হবে না, এটি সরকারের অভ্যন্তরীণ অবস্থান।’
তিনি জানান, সৌরবিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য খাতে একবার বিনিয়োগ করলে এটি ন্যুনতম ২০ বছর ব্যবহার করা যায়। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এতে বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ করাও সহজ।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। আমাদের পাশের দেশ ভারতে এখন ৩৫ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। আমাদেরও উচিত দীর্ঘমেয়াদে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সৃষ্টি করা। কয়লার এখন যেগুলা প্রকল্প চলমান, সেগুলা তো বাদ দেওয়া যাবে না। কিন্তু ভবিষ্যতে যাতে আর কয়লা না নিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
এ সময় ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাংলাদেশে এখনও কাবন নিঃসরণ কম হলেও যে হারে শিল্পায়ন হচ্ছে, বিনিয়োগ হচ্ছে, তাতে কাবন নিঃসরণ আরও বাড়বে। ফলে এখনই কয়লা থেকে সরে আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করা উচিত।’