‘বিদ্যুৎকর্মীদের ব্যাখ্যা নয় গ্রাহক সন্তুষ্টির কথা শুনতে চাই’

জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেছেন, গ্রাহকদের সন্তুষ্টি চাই বিতরণ কোম্পানির কর্মীদের ব্যাখ্যা শুনতে চাই না। শনিবার বিকেলে (২০ ফেব্রুয়ারি) এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার (ইপি) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে উপদেষ্টা এক কথা বলেন।

কোনও একটা অভিযোগ ওঠার পর বিতরণ কোম্পানির কর্মিরা নানা রকম ব্যাখ্যা দিতে চান উল্লেখ করে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, কিন্তু আমরা গ্রাহক সন্তুষ্ট কি না সেটা জানতে চাই। তাদের ব্যাখ্যা শুনতে চাই। কারণ যে কোনও ব্যবসায় গ্রাহক সন্তুষ্টি হচ্ছে আসল বিষয়।

ওয়েবিনারে জানানো হয়, এবার গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এরজন্য দৈনিক এক হাজার ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ প্রয়োজন হবে। এই পরিমাণ গ্যাস না পেলে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা কঠিন হবে বলে ওয়েবিনারে জানানো হয়।

উপদেষ্টা বলেন, আমাদের এলএনজি আমদানি স্বাভাবিক রাখতে আমরা স্পট মার্কেট থেকে দুই লট এলএনজি কিনেছি। আমরা আশা করছি স্পট মার্কেট থেকে আরও একটি লট এলএনজি কিনব। কোন সময়ে যদি এলএনজি সরবরাহ বেড়ে যায়। তাহলে আমরা দেশের গ্যাসের উৎপাদন কমিয়ে দেব। তিনি বলেন, উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণ সকল বিষয়ের দিকেই আমাদের নজর দিতে হবে।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, গতবার গ্রীষ্মে গ্যাস সংকটের কারণে আমরা তিন হাজার মেগাওয়াট গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চালাতে পারিনি। এবার গ্যাস থেকে সাত হাজার ৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন গড়ে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। এই সরবরাহ আরো ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়াতে হবে। এছাড়া ফার্নেস অয়েলে চার হাজার ৫৭০ মেগাওয়াট, কয়লা দিয়ে ৭৫০ মেগাওয়াট, জল এবং সৌর থেকে ৫০ মেগাওয়াট, আমদানি করা হবে এক হাজার ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন বলেন,  আরইবির জন্য আমরা করোনার মধ্যে সাত হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছি। এবার আমরা মনে করছি আরইবির জন্য সাড়ে আট হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের বিতরণের সব ঠিক থাকলেই হবে না আমাদের উৎপাদনও ঠিক থাকতে হবে। এজন্য প্রাথমিক জ্বালানির সংস্থান ঠিক রাখতে হবে।

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, বিদ্যুতের লাইনের কোনও রকম সংস্কার করতে হলে আমাদের আলাদা করে বিতরণ কোম্পানির লোকদের টাকা দিতে হয়। আবার মাস শেষে বিলের সঙ্গেও আমাদের টাকা দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের বিপণীবিতানে একটি একক মিটার থেকে বিল নেওয়া হয়। আমাদেরই দোকান মালিকদের কাছ থেকে বিল তুলে দিতে হচ্ছে। এতে বিদ্যুতের দাম বেশি পড়ছে।

বুয়েটের অধ্যাপক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, ডিমান্ড সাইড ম্যানেজমেন্ট ঠিক মতো করা হয়নি। আমাদের গ্রীষ্ম এবং শীতের চাহিদার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। গ্রীষ্মে আমাদের চাহিদা সর্বোচ্চ ১৫ হাজার মেগাওয়াটে চলে যাবে। আবার শীতে এসে আমাদের চাহিদা ছয় হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে। গ্রীষ্মে এবং শীতে বিদ্যুতের এই চাহিদা হ্রাস বৃদ্ধির কারণে অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রাখতে হয়। এটি খুব ব্যয়বহুল। এটি কীভাবে কমিয়ে আনা যায় সেই চিন্তা করতে হবে।

ইপি সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে অন্যদের মধ্যে পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক মাসুম আলম বকশি, ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি (ইজিসিবি) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অরুন কুমার সাহা, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফি, ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দার বক্তব্য রাখেন।