প্রতিমাসেই দাম ঘোষণা হয় এলপিজির

বিধি ছাড়াই নিধিরাম সর্দার কমিশন!

গত ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এরপর মে, জুন ও জুলাই মাসে দাম সমন্বয় করা হয়। কিন্তু গোটা দেশের কোথাও কমিশনের নির্ধারিত দামে এলপিজি পাওয়া যায় না। দাম না মানার ঘোষণাও দিয়েছেন এলপিজি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কমিশন দাম বাস্তবায়ন না করে মাসের পর মাস শুধু মূল্যই নির্ধারণ করে যাচ্ছে।

কমিশন বলছে, আইনে শাস্তির ব্যবস্থা থাকলেও তা বাস্তবায়নের জন্য বিধি প্রণয়ন করতে হবে। যা কমিশনের কাজ নয়, জ্বালানি বিভাগের কাজ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমিশনের আইন দিয়েই কাজটি করতে হবে। এতে কোনও অজুহাত খাটবে না।

কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কমিশনের নির্ধারিত দাম কেউ না মানলে আমরা বিইআরসি আইনের ৪৩ ধারা অনুযায়ী শাস্তি দিতে পারি। কিন্তু শাস্তি প্রদানে বিধির প্রয়োজন। যা আমরা প্রণয়ন করতে পারি না। এটা মন্ত্রণালয় করতে পারে। তারা যদি আমাদের বলে, আমরা খসড়া করে দিতে পারি। আপাতত দাম বাস্তবায়নের জন্য কমিশন একটি প্রবিধানমালা করছে। খসড়া চূড়ান্ত হলে অনুমোদনের জন্য জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পরে সেটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং হয়ে চূড়ান্ত হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি দামের বিষয়ে সরাসরি কমিশনে অভিযোগ করেন তা হলে লাইসেন্সিং কোম্পানির সঙ্গে আমরা কথা বলতে পারি।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গতবছরের ২৫ আগস্ট বিইআরসিকে গণশুনানির মাধ্যমে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের দীর্ঘসময় অতিবাহিত হলেও কমিশন তা প্রতিপালন না করায় রুল জারি করেন আদালত। এরপর গত ১০ জানুয়ারি গণশুনানির দিন ঠিক করে কমিশন। শুনানির ৯০ দিনের মধ্যে ১২ এপ্রিল তারা প্রথমবারের মতো এলপিজির দামের ঘোষণা দেয়। কিন্তু সেই দাম কিভাবে কার্যকর হবে বা মনিটরিং করা হবে সেই নির্দেশনা দেয়নি। উল্টো কমিশন বলেই দিয়েছে নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রি হবে কিনা সেটার নিয়ন্ত্রণ কমিশনের হাতে নেই। কে নিয়ন্ত্রণ করবে সেটাও বলেনি কমিশন।

জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান সম্প্রতি এক সভায় বলেন, ‘মন্ত্রণালয় এটি মনিটর করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কমিশন বা মন্ত্রণালয় কেউই এ মূল্য বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি। এতদিন পর কমিশন বলছে, বিধি প্রয়োজন। যার কাজ এখনও শুরুই হয়নি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, ‘আদালতের আদেশে এলপিজির দাম যেমন তারা নির্ধারণ করছে তেমনি দাম বাস্তবায়ন করাও তাদের কাজ। কমিশন আইনের ৪৩ ধারা অনুযায়ীই তারা ব্যবস্থা নিতে পারে। এখন তারা দাম নির্ধারণ করলো কিন্তু বাস্তবায়ন করলো না, সেটিও কিন্তু কোর্টের আদেশ না মানার সামিল।’

প্রসঙ্গত, বুধবার (৩০ জুন) জুলাই মাসের এলপিজির দামের ঘোষণা দেয় কমিশন। তাতে, বেসরকারি পর্যায়ে এলপিজির দাম প্রতি ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম মূসকসহ ৮৯১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি লিটার অটোগ্যাসের দাম ৪১ দশমিক ৮৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

এর বাইরে ৫.৫, ১২.৫, ১৫, ১৬, ১৮, ২০, ২৫, ৩০, ৩৩, ৩৫ ও ৪৫ কেজি এলপিজির দামও বিইআরসি আদেশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।