আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েই চলেছে এলপিজির

আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে এলপিজির দাম। এখন সর্বোচ্চ দরে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি। সর্বশেষ জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রোপেন ও বিউটেনের দাম টন প্রতি ১০০ ডলার বেড়ে ৬২০ ডলারে ঠেকেছে৷ আন্তর্জাতিক বাজারের এই ঊর্ধ্বগতি আগে কখনও দেখা যায়নি।

প্রসঙ্গত, সৌদি সিপি (কনট্রাক্ট প্রাইস) অনুযায়ী দেশে এলপিজির দাম নির্ধারিত হয়। এলপিজি হচ্ছে পেট্রোলিয়াম উপজাত প্রোপেন ও বিউটেনের সংমিশ্রণ। এটি ১০-১৫ বার চাপ দিয়ে তরল গ্যাসে রূপান্তর করা হয়। সাধারণ তাপমাত্রায় এটি গ্যাসীয় পদার্থে পরিণত হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের হিসাবে এভাবে দরের ঊর্ধ্বগতি দেখা যায় নি। তবে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে সৌদি সিপির প্রাইস লিস্টে প্রোপেন ও বিউটেনের দাম সর্বোচ্চ ৬৫৫ ডলারে ঠেকে। তবে এই দাম পরের মাসগুলোতে সাড়ে ৪০০ ডলারের নিচে নেমে আসে। এছাড়া এইভাবে এর আগে কখনো দাম ৬০০ ডলার অতিক্রম করেনি। এবারই পর পর মাস টন প্রতি ১০০ ডলার করে বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ২০১৮ সালের পরিস্থিতির সঙ্গে ভিন্নতা রয়েছে বর্তমানের। তখন বিশ্ব স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলেও এখন করোনার কারণে অস্বাভাবিক অবস্থায় আছে। সঙ্গত কারণেই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম থাকার কথা। তেলের দামের ওপর নির্ভর করে সব পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়। তাই এলপিজির দাম কম থাকার কথা ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে করোনার মধ্যে বিশ্বের বহু দেশ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করায় জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়েছে। এতে করে অন্য পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধিতে দামও বেড়েছে।

গত জুন মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রোপেন ও বিউটেনের দাম ছিল যথাক্রমে টন প্রতি ৫২৫ ডলার এবং ৫৩০ ডলার। কিন্তু জুলাই মাসে তা বেড়ে দুটোরই হয়েছে ৬২০ ডলার করে। অর্থাৎ ১০০ ডলার করে বেড়েছে টন প্রতি। এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতেই দাম ছিল ৫৫০ ও ৫৩০ ডলার।

সৌদি সিপির প্রাইস লিস্টে দেখা যায়, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রোপেন ও বিউটেনের দাম যথাক্রমে টন প্রতি ছিল ৫৬৫ ডলার ও ৫৯০ ডলার। একইভাবে ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৫০৫ ডলার ও ৫৪৫ ডলার, মার্চে ৪৩০ ও ৪৮০, এপ্রিলে এসে আরও কমে ২৩০ ও ২৪০ ডলার হয়৷  মে মাসে আবার দুটোই বেড়ে ৩৪০ করে হয়, এরপর জুন মাসে ৩৫০ ও ৩৩০, জুলাইয়ে ৩৬০ ও ৩৪০ ডলার, আগস্টে ৩৬৫ এবং ৩৪৫ ডলারে উঠে। সেপ্টেম্বরে ৩৬৫ ও ৩৫৫, অক্টোবরে ৩৭৫ ও ৩৮০, নভেম্বরে দাম উঠে ৪৩০ ও ৪৪০ এ, ডিসেম্বরে  প্রোপেন ও বিউটেনের দাম গিয়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৪৫০ ডলার ও ৪৬০ ডলারে।

দাম বাড়ার এই ঊর্ধ্বগতির প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। দেশেও জুলাই ও আগস্ট মাসে এলপিজির দাম বেড়েছে। তবে তার আগের মাসে অর্থাৎ মে মাসে দাম কিছুটা কমেছিল। আগে বেসরকারি কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছামত দামে এলপিজি বিক্রি করলেও গত এপ্রিল থেকে একটি নির্দিষ্ট দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে বাংলা এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ( বিইআরসি)।  তারা সর্বশেষ গত ৩০ জুলাই চলতি মাসের এলপিজির দাম নির্ধারণ করে। তাতে দেখা যায়, বেসরকারি পর্যায়ে এলপিজির দাম প্রতিকেজি ৭৭ টাকা ৪০ পয়সা ধরে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৯৯৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা জুলাই মাসে ছিল ৮৯১ টাকা এবং জুন মাসে ছিল ৮৪২ টাকা।

এলপিজি বিশেষজ্ঞ ও বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) মকবুল ই ইলাহী এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ায় দামও বাড়ছে, একই কারণে বাড়ছে এলপিজির দামও। এছাড়া পানামা ক্যানেলে কিছু রেস্ট্রিকশনের কারণে এলপিজির সরবরাহ কিছুটা কমে গেছে। এটিও একটি কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির দাম বাড়ার।