এলপিজির মূল্য নির্ধারণ নিয়ে আইনি জটিলতায় বিইআরসি

এলপিজির দাম নির্ধারণ নিয়ে আইনি জটিলতায় পড়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিপণন করা এলপিজির মূল্য নির্ধারণকে বিইআরসি আদেশের বাইরে রাখার বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের নির্দেশনাকে ঘিরে দেখা দিয়েছে এ জটিলতা।

বিইআরসি বলছে, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখানে দুই ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিইআরসি ছাড়া অন্য কারও এলপিজির দাম নির্ধারণের এখতিয়ার নেই। অন্যদিকে উচ্চ আদালত যে আদেশ দিয়েছেন তাতে সরকারি-বেসরকারি এলপিজিকে আলাদা করা হয়নি। ফলে শুধু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এলপিজির মূল্য নির্ধারণ করা হলে তা প্রশ্নের জন্ম দেবে।

জানতে চাইলে বিইআরসির একজন সদস্য বলেন, জ্বালানি বিভাগ আমাদের আদেশ দিলে তা মানতেই হবে। সেক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই কিছু সমস্যা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শুরুতে সরকার এলপিজির বাজার নিয়ন্ত্রণে বিইআরসির মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়। তবে বেসরকারি বিপণন কোম্পানিগুলোর অনাগ্রহে দীর্ঘদিন এ প্রক্রিয়া ঝুলে ছিল। এরমধ্যে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশনের (ক্যাব) করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত বিইআরসিকে গণশুনানি করে এলপিজির দাম নির্ধারণের নির্দেশ দেয়।

চলতি বছরের শুরুতে গণশুনানির পর ১২ এপ্রিল প্রথম দফা মূল্য ঘোষণা করে বিইআরসি। তবে ব্যবসায়ীদের দাবিতে আরও এক দফা গণশুনানি হয়। ওই শুনানির পর গত ৭ সেপ্টেম্বর সরকারি এলপিজির মূল্য নির্ধারণকে বিইআরসি আদেশের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়ে চিঠি দেয় জ্বালানি বিভাগ।

এর আগে সরকারি ও বেসরকারি এলপিজির আলাদা দর ছিল। দাম নির্ধারণ করতো বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সেখানে বেসরকারি এলপিজির চেয়ে সরকারি এলপিজির দাম সিলিন্ডারপ্রতি অন্তত ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কম ছিল। কিন্তু বিইআরসির আদেশে সরকারি ও বেসরকারি এলপিজির দাম সমান করে দেওয়া হয়। এতে মানুষ সরকারি এলপিজির প্রতি আগ্রহ হারায়। বেসরকারি বিপণন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায়ও সরকারি এলপিজি পিছিয়ে পড়ে।

এসব কারণে সরকারি এলপিজির দাম আগের মতোই বিপিসির হাতে রাখার সুপারিশ করে প্রতিষ্ঠানটি। সরকারি বিপণন প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেড-এর আবেদন বিপিসি ঘুরে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে আসার পরই মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ নেয়। ক্যাব এক চিঠিতে সম্প্রতি বিইআরসিকে জানিয়েছে, এলপি গ্যাস লিমিটেডের এলপিজির দাম নির্ধারণের দায়িত্ব বিপিসিকে দেওয়া এবং বিইআরসির এখতিয়ার-বহির্ভূত রাখতে বলায় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ বিইআরসি আইনের ২২ (খ) উপধারা লঙ্ঘন করেছে। এই আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী আইন লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অন্যদিকে এতে উচ্চ আদালতের আদেশও অমান্য করা হয়েছে। ফলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ আদালত অবমাননার দায়েও অভিযুক্ত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিইআরসির আইন অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি এলপিজিকে আলাদা করার সুযোগ নেই। বরং আইন অনুযায়ী সব ধরনের জ্বালানির দাম নির্ধারণ করার কথা কমিশনেরই। তিনি বলেন, সরকারি এলপিজির দাম বিপিসি নির্ধারণ করবে বলে জ্বালানি বিভাগ বিইআরসিকে যে চিঠি দিয়েছে তা আইন-বহির্ভূত। সেই সঙ্গে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কিছু বলাটা আদালত অবমাননারও শামিল। আমরা বিষয়টি আদালতের সামনে আনার চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।