অস্থিতিশীল বিশ্ববাজার, কোথায় ঠেকবে এলপিজির দাম?

বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতায় এলপিজির দাম বেড়েই চলছে। এই দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কেউ বলতে পারছে না। আন্তর্জাতিক বাজারে গত তিন মাস এলপিজির কাঁচামাল প্রোপেন এবং বিউটেনের দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তে থাকায় ক্রমান্বয়ে এলপিজির দাম বাড়তে শুরু করেছে।

বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম বাড়তে থাকায় গত মাসের তুলনায় চলতি মাসে দেশে এলপিজির দাম বেড়েছে। পরিস্থিতি বলছে, আগামী মাসেও এই বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে। ফলে এই দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কেউ বলতে পারছে না। ইউক্রেন সংকটের কারণে বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম হুট করে ১১৩ ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন এখন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন,  এলএনজি আমদানি এবং তেল আমদানিতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। কিন্তু এলপিজিতে কোনও ভর্তুকি নেই। উল্টো এলপিজিতে আরও সাত ভাগের মতো কর দিতে হয়। এই করের জন্য এলপিজির দাম বেড়ে যায়। এর আগে ২০১৪ সালে বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম বেড়ে গিয়ে ১১৫০ ডলারে দাঁড়ায়।

ডিসেম্বর মাসে সৌদি আরামকো কর্তৃক প্রোপেন ও বিউটেনের ঘোষিত (সৌদি কনট্রাক্ট প্রাইস-সৌদি সিপি) যথাক্রমে প্রতি মেট্রিক টন ৭৯৫ মার্কিন ডলার এবং ৭৫০ মার্কিন ডলার ছিল। জানুয়ারি মাসে ছিল ৭৪০ এবং ৭১০ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে দুইটাই ৭৭৫ এবং মার্চ মাসে তা ৮৯৫ এবং ৯২০ ডলারে উঠেছে।

বিইআরসির সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, আমাদের জ্বালানি আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে। এখন ইউক্রেনে যুদ্ধ হচ্ছে। ভবিষ্যতে অন্য কোথাও হতে পারে। তখন তো আমাদের আবার বিপদে পড়তে হবে। সঙ্গত কারণে আমাদের দেশীয় উৎপাদনের ওপর জোর দিতে হবে। সেক্ষেত্রে এলপিজি কম আমদানি করতে হবে। দেশের গ্যাস দিয়েই চলা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, সিস্টেম লস কমাতে আমাদের কিছু প্রিপেইড মিটার আছে। সবাইকে প্রিপেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যতটা প্রলম্বিত হবে ততই তেলের দাম বাড়বে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে সেই অনুপাতে এলএনজি এবং এলপিজির দাম বাড়বে। রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় তেল রফতানিকারক দেশ। ইউরোপের চাহিদার ৪০ ভাগ গ্যাস পূরণ করে রাশিয়া। এখন পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার ওপর নানামুখী অবরোধ আরোপ করায় আন্তর্জাতিক বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। সঙ্গত কারণে ভবিষ্যৎ বাজার বিশ্লেষণের যে হিসাব আগে থেকে ছিল তা এখন ঠিক রাখা যাচ্ছে না। এমনিতে করোনা পরবর্তী পৃথিবী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল হলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বাড়তে শুরু করে। যুদ্ধের দামামা তা আরও উসকে দিয়েছে।

ডিসেম্বরে বিইআরসি নির্ধারিত প্রতি কেজি সিলিন্ডার এলপিজির দাম ছিল মূসকসহ ১০২ টাকা ৩২ পয়সা ছিল। এরপর জানুয়ারিতে তা কমে দাঁড়ায় ৯৮ টাকা ১৭ পয়সা, এরপর ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৩ টাকা ৩৪ পয়সায় এবং মার্চে তা এসে আরও বেড়ে হয় ১১৫ টাকা ৮৮ পয়সা।

প্রসঙ্গত, দেশে এলপিজি ক্লিন ফুয়েল (পরিবেশবান্ধব জ্বালানি) দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছিল। কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে। এখন দেশের ২৫/৩০ লাখ পরিবার এলপিজি ব্যবহার করে। দেশের পেট্রোলের চেয়ে সস্তা হওয়ায় পরিবহনেও এলপিজি ব্যবহার শুরু হয়েছে। দিন দিন এর পরিমাণ বাড়ছিল। কিন্তু এখন দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ অটোগ্যাস ব্যবহার নিয়ে চিন্তায় রয়েছে।