৯ হাজার কোটি টাকার গ্যাস বিল বকেয়া

বেড়েই চলেছে গ্যাসের বকেয়া। গত জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ৯ হাজার ২৭৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বকেয়া পড়েছে গ্রাহকের কাছে। গ্যাস বিল আদায় করতে হিমশিম দশা এখন বিতরণ কোম্পানির। বিল আদায়ে এবার জেনারেল ম্যানেজারদের (জিএম) মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। কোনও কারণে বিল আদায়ে ব্যর্থ হলে কর্মকর্তাদের এসিআর (সরকারি চাকরির গোপনীয় প্রতিবেদন) আটকে যেতে পারে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় কোম্পানির মোট বকেয়ার পরিমাণ ৯ হাজার ২৭৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বকেয়ার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৬ হাজার ৬৩৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এরপরে আছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ৮১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ৮০৫ কোটি ৯৭ লাখ, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ৭৩৯ কোটি ৪ লাখ টাকা, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির ১৭৬ কোটি ৩৬ লাখ এবং পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির ৯৯ কোটি ২ লাখ টাকা।

শুধু বেসরকারি গ্রাহকরাই গ্যাস ব্যবহারের পর অর্থ আটকে রাখে না। সরকারি ব্যবহারকারীরাও বিপুল পরিমাণ বিল আটকে রেখেছে।

তিতাস গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ জানান, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট বকেয়ার পরিমাণ ৬ হাজার ৬৩৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি পর্যায়ে বকেয়া ৭৪৩ কোটি টাকা ও বেসরকারি পর্যায়ে ৫ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। সরকারি বকেয়ার মধ্যে ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি)'র ১৯৯ কোটি, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)'র ১৯১ কোটি, আবাসিকে ৮১ কোটি ৮০ লাখ, সশস্ত্র বাহিনীর ২১ কোটি ৫৩ লাখ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১৬ কোটি, বিভিন্ন সার কারখানার ১৩ কোটি, বস্ত্র ও পাট শিল্পের ১৩ কোটি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১২ কোটি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৯ কোটি, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ৯ কোটি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ৫ কোটি, রেল পথ মন্ত্রণালয়ের ২ কোটি ৯৭ লাখ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ১ কোটি ৯৫ লাখ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১ কোটি ৮৮, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ১ কোটি টাকা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিকট ১ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।

জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহাবুব হোসেন বকেয়া আদায়ে মনিটরিং জোরদার করার জন্য সকল গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের মাসভিত্তিক বিক্রির পরিমাণ আদায় ও বকেয়া এবং পূর্ববর্তী মাসের বকেয়া ও আদায়ের পরিমাণ পৃথকভাবে ছকে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির কাছে এই বিল বকেয়া পড়েছে। যাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা এখন বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিল আদায় করতে চাপ দিলেই তারা নানা অজুহাতে মামলা করে দিচ্ছে। আমরা এইসব মামলা পরিচালনার ওপরও জোর দিচ্ছি। যাতে আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরে আদালতকে বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হই।