ক্যাপটিভ পাওয়ার বা শিল্পের জন্য নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিরুৎসাহিত করতে পিডিবি অনুরোধ জানিয়েছে। পিডিবির পক্ষ থকে সম্প্রতি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসিকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
পিডিবির দাবি, ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে বিতরণ কোম্পানির অবহেলার শিকার হচ্ছে দক্ষ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে একদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে থাকছে, অপরদিকে সরকারের ভর্তুকির গ্যাস ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টে অপচয় হচ্ছে বলে মনে করছে বিপিডিবি।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, সারা দেশে এখন তিন হাজার মেগাওয়াটের বেশি ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। শিল্প মালিকরা নিজেদের কারখানার বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে নিজস্ব উদ্যোগে কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করেছে।
ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার নানাভাবে চেষ্টা করলেও দেশে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে—শিল্প মালিকরা নিজস্ব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে প্রতি কিলোওয়াট/আওয়ার (ইউনিট) বিদ্যুতের দাম চার টাকার নিচে পড়ে। অপরদিকে গ্রিডের বিদ্যুতের দাম পড়ে ফ্ল্যাট রেট ৮ টাকা ৫৫ পয়সা। বিদ্যুতের দামের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়াকেও দায়ী করছেন অনেকে।
এই বিতর্কের মাঝেই পিডিবি শিল্পে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহকে নিরুৎসাহিত করার এই অনুরোধ জানিয়েছে। বিপিবি বলছে, সরকার বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির ফলে বিদ্যুৎসহ শিল্পে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্যাস কোম্পানিগুলো ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টে গ্যাস সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে। ফলে শিল্প মালিকরা গ্যাসভিত্তিক ক্যাপটিভ পাওয়ার উৎপাদনে উৎসাহিত হচ্ছে। অপরদিকে বর্তমানে বিউবোসহ বিতরণ সংস্থা বা কোম্পানিগুলো গ্রাহককে তার চাহিদা অনুযায়ী, বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম। কিন্তু বিউবো দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের জন্য তরল জ্বালানি ও গ্যাসসহ অন্যান্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে। ফলে গড় সরবরাহ মূল্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় বেশি পড়ে।
এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ হ্রাস পাওয়ায় একাধিক কম্বাইন্ড সাইকেল তথা দক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্র আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এক্ষেত্রে গ্যাসভিত্তিক ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনে বিদ্যুৎ গ্রাহককে নিরুৎসাহিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়। নতুবা বিদ্যুৎ খাতের গ্যাসভিত্তিক দক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অলস হয়ে পড়বে। অপরদিকে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য আবার বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আত্মঘাতী। কেননা, এখন আমাদের যে জ্বালানি ব্যবস্থা, তাতে উৎপাদন বা সরবরাহ ক্ষমতা বাড়লেও বিদ্যুৎ বা গ্যাস কোনোটি নিরবচ্ছিন্ন দেওয়া যাচ্ছে না। শিল্প মালিকরা ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে তা নিরবচ্ছিন্ন করে উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখছেন। এ অবস্থায় যদি এমন কোনও নীতিমালা করা হয়, সেটি হবে শিল্প মালিকদের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো।’