গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে গ্যাস বন্ধ। প্রথম দুই দিন হোটেল থেকে এনে খেয়েছেন। এরপর দাম দ্বিগুণ এবং লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার নিতে হয় বিধায় এখন বিকল্প হিসেবে কাঠের চুলায় রান্না করা হচ্ছে। মাঝে মাঝে কেরোসিনের চুলাও চলে। কেউ কেউ রাইচকুকারও ব্যবহার করছেন। ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দাদের এভাবে চলছে মানবেতর জীবন।
সেখানকার বাসিন্দারা জানান, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কাঠ আর কেরোসিনের দামও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বেড়ে গেছে হোটেলের খাবারের দাম। মধ্যবিত্তের সংসারে বেতনের অর্ধেক যায় বাসা ভাড়ায়, আর এখন অর্ধেক চলে যাচ্ছে খাবারের ব্যবস্থা করতে গিয়ে। মাস চলবেন কী দিয়ে?
রুবেল বিশ্বাস বলেন, ‘কেরোসিনের দামে চলছে অরাজকতা। কোথাও লিটার ৮০ তো কোথাও ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লাকড়ির চুলায় রান্না করে ধোয়ায় কষ্ট পাচ্ছেন অনেকে। আমরা খুব বিপদে আছি। সারাদিন অফিসে কাজ করে আবার খাবারের চিন্তা করতে হচ্ছে। কিনে আনতে হচ্ছে খাবার।’
সেলিম পাটোয়ারী বলেন, ‘সব গ্যাস বন্ধ। আমি থাকি আবুসাঈদ বাজারের পশ্চিমে। আশেপাশে কোথাও গ্যাস নেই। আমার লাইন বৈধ এবং কোনও বকেয়া নেই। সমস্যা হচ্ছে অনেক অবৈধ লাইন আছে। কিন্তু দোষ কার? অবৈধ লাইনের কারণে আমাদের বৈধ লাইনও কেটে দিয়েছে। এটা কি যুক্তি?’
প্রসঙ্গত, বৈধ সংযোগের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি অবৈধ সংযোগ, আর বৈধ গ্রাহকদের কাছে ৬৭ কোটি বকেয়ার অভিযোগে গত ১০ মে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরে সব গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয় তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি।
তিতাসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অবৈধ গ্রাহকদের শায়েস্তা করতে গ্যাসের ভাল্ব খুলে নিয়ে আসা হয়েছে। এ জন্য বৈধদের গ্যাসও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
এর সমাধান কী হবে জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেখানে বৈধ গ্রাহকের চেয়ে অবৈধ গ্রাহকের সংখ্যা বেশি। এদিকে অবৈধ সংযোগ কেটে দিলেই পরদিন আবার তা স্থাপন করে ফেলছে। আবার বৈধ গ্রাহকদের মধ্যে অনেকের কাছে আমাদের বকেয়া প্রায় ৬৭ কোটি টাকা। আমরা বেশি দামে বিদেশ থেকে এলএনজি এনে এভাবে তো গ্যাস চুরি করতে দিতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে সব লাইন বন্ধ করে দিয়েছি।’
এখন বৈধ গ্রাহকদের কী হবে জানতে চাইলে তিনি জানান, আগামী সোমবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মিটিং আছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। উনারা একটি কমিটি গঠন করবেন। সেই কমিটির মাধ্যমে অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ করবেন, বকেয়া আদায় করে দেবেন, তারপর আমরা লাইন দিয়ে দেবো। এভাবে দিনের পর দিন সরকারি সম্পত্তির অপচয় করা যায় না।
ছবিগুলো কামরাঙ্গীরচরের ভুক্তভোগীদের তোলা