‘গ্যাস নেই সাত দিন, চরের সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। অথচ এলাকার জনপ্রতিনিধি বা তিতাসের কারও কোনও মাথাব্যথা নেই। ছয় দিন ধরে এলাকাবাসী মাটির চুলা, কেরোসিনের চুলা, রাইসকুকারে রান্না করে খাচ্ছে। এই সুযোগে লাকড়ি-কেরোসিনের দাম বেড়েছে। মাঝে মাঝে হোটেল থেকে কিনেও খাচ্ছে মানুষ। সেখানেও খাবারের দাম বেড়েছে। এই ভোগান্তি দেখার কেউ নেই। তাই আজ আমরা রাস্তায় নেমেছি প্রতিবাদ করতে।’ এভাবে কামরাঙ্গীরচরের মানুষের ভোগান্তির কথা জানাচ্ছিলেন সেখানকার বাসিন্দা ইরতেজা হাসান রেজা।
বৈধ সংযোগের চেয়ে পাঁচগুণ অবৈধ সংযোগ, আর বৈধ গ্রাহকদের কাছে ৬৭ কোটি টাকা বকেয়ার অভিযোগে গত ১০ মে সন্ধ্যা ছয়টায় রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে সব গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয় তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি।
বর্তমানে আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্যিক মিলিয়ে কামরাঙ্গীরচরে তিতাসের গ্রাহক ১২ হাজারের মতো।
এভাবে বৈধ গ্রাহকদের লাইন কেটে দেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফি বলেন, ‘গ্রাহকদের সঙ্গে গ্যাস বিতরণ কোম্পানির চুক্তি মোতাবেক কারিগরি কারণে গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হওয়া, বৈধ গ্রাহকের অবৈধ ব্যবহার অথবা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হওয়া ছাড়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা চুক্তির লঙ্ঘন। অবৈধ গ্রাহকের দোহাই দিয়ে বৈধ গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা গণতান্ত্রিক দেশে কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক আইনের আশ্রয় নিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বিপুল সংখ্যক অবৈধ গ্রাহক থাকার জন্য তিতাস কর্তৃপক্ষও সমানভাবে দায়ী। বৈধ গ্রাহক যারা নিয়মিত বিল পরিশোধ করছেন, তাদের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা চুক্তির বরখেলাপ ও অন্যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গত শনিবার তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লা বলেন, ‘আজ সোমবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মিটিং আছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তারা একটি কমিটি গঠন করবেন। সেই কমিটির মাধ্যমে অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ করবেন। বকেয়া আদায় করে দেবেন। তারপর আমরা লাইন দিয়ে দেবো।’
জানা যায়, বৈধ গ্রাহকদের কাছে যে বকেয়া ৬৭ কোটির কথা বলা হচ্ছে, তা কেবল কয়েকজন বড় গ্রাহকের কাছেই পাওনা। একেকজনের কাছে প্রায় ৯ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বকেয়া আছে।