‘বিদ্যুতে অযৌক্তিক ব্যয় সমন্বয় হলে ৩৩৭২ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে’

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি আয়োজিত গণশুনানিতে ভোক্তারা বলেছেন, অযৌক্তিক ব্যয় সমন্বয় হলে বিদ্যুৎ খাতে ৩ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে। মূল্যবৃদ্ধি কিংবা ভর্তুকি প্রদানের প্রয়োজনই হবে না। বিদ্যুতের দাম বাড়ালে এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বরং কিছু পদক্ষেপে নিলে দাম বাড়ানোর তো দরকারই নেই, আরও দাম কমানো সম্ভব।

বুধবার (১৮ মে) রাজধানীর বিয়াম অডিটরিয়ামে বিইআরসি আয়োজিত গণশুনানিতে এসব কথা বলেছেন তারা।

পিডিবির তরফ থেকে বলা হচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতির পুরোটা সরকারের পকেট থেকে দিতে হয়। কিন্তু শুনানিতে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘সম্প্রতি সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপরে ৬ ভাগ নতুনভাবে আরোপ করা না হলে, তেলে শুল্ক-কর অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা না হলে, কয়লার ওপর ৫ ভাগ ভ্যাট নতুনভাবে আরোপিত না হলে, ব্যক্তি খাতের পরিবর্তে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত তেল বিপিসি'র মাধ্যমে আমদানি হলে, মোট ৮ হাজার ৮৩৩ কোটি ঘাটতি কমবে।’

তিনি বলেন,‘অবৈধভাবে নির্ধারিত ডিজেল ও ফার্নেসওয়েলের বর্ধিত মূল্য এবং কুইক রেনটালের বিদ্যুৎ অবৈধভাবে ক্রয়কৃত মূল্য পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যহারে সমন্বয় না হলে, ঘাটতি কমবে ১৪ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা।’

ভোক্তারা বলেন, ১৩২ কেভি থেকে তদুর্ধ্বের ভোল্টেজ লেভেলের ভোক্তাদের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার ভর্তুকিযুক্ত হলে এবং বিতরণ ইউটিলিটি ভেদে তা অভিন্ন হলে পিডিবি’র আয় বাড়বে, অর্থাৎ ঘাটতি কমবে ১৩২৮ কোটি টাকা।

দেশের ১৯টি পিবিএস-এ ভোক্তা মিশ্রণ পিডিবি, ডেসকো, ও ডিপিডিসি'র সমতুল্য। তাদের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার যৌক্তিক করা হলে সাশ্রয় হবে ৩৫৫৬ কোটি।

তারা বলেন, তাছাড়া পিডিবি'র কম্বাইন্ড সাইকেল প্ল্যান্টগুলোতে ৫৩ ভাগের পরিবর্তে ৬৭ ভাগ পিএফ-এ বিদ্যুৎ উৎপাদন হলে সাশ্রয় হবে ১৫ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা।

ফার্নেসওয়েলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এখন পিডিবি'র ঘাটতি প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ভর্তুকিতে আরইবিকে বিদ্যুৎ দেওয়ায় ঘাটতি বৃদ্ধি পায় ২০ হাজার কোটি টাকা। আরইবির ঘাটতিসহ মোট ঘাটতি ওপরের বর্ণনা মতে অযৌক্তিক ব্যয় সমন্বয় হলে ৩ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে। মূল্যবৃদ্ধি কিংবা ভর্তুকি প্রদানের প্রয়োজনই হবে না।

বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন বলেন, ‘এইভাবে দাম বাড়ানো হলে ব্যবসায়ীরা অন্য কোনও অসৎ উপায় অবলম্বন কর‍তে পারে। চুরি করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে। ব্যবসায়ীরা বিকল্প হিসেবে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। ভোক্তাকে সুবিধা দিতে পিডিবির সাশ্রয়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ব্যবহার করতে হবে। একইসঙ্গে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির এই প্রস্তাব কতটুকু যৌক্তিক, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি সভাপতি নিহাদ কবি বিদ্যুতের দাম একবারে অনেক না বাড়িয়ে অল্প অল্প করে বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘একবারে বেশি দাম বাড়ালে পণ্যের দাম ও ভোক্তাদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।’

এফবিসিসিআই’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী ব্যবসায়ীদের পক্ষে একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন।