সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে যত সমস্যা

সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে পিডিবি, সরকারি কোম্পানি আর বেসরকারি উদ্যোক্তাদের দামে রয়েছে বিশাল ফারাক। যেখানে পিডিবি এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় করছে ৮ টাকা ৫০ পয়সা, সেখানে সরকারি কোম্পানি ১৪ টাকা আর বেসরকারি উদ্যোক্তারা ব্যয় করছে ১৭ টাকা ৩৫ পয়সা। দেশে গ্রিডভিত্তিক যে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে তার ব্যয় বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

পিডিবি ও সরকারি কোম্পানির ব্যয় কম হলেও উৎপাদন কম। মাত্র ৮ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে পিডিবির হাতে। কাপ্তাই জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশের জমিতে এটি নির্মাণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে সরকারি কোম্পানি নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি সিরাজগঞ্জে একটি ৭ মেগাওয়াটের কেন্দ্র থেকেই সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করে। তবে বেসরকারি উদ্যোক্তারা ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও বেসরকারি কোম্পানি সোলার বিদ্যুতের প্রস্তাব জমা দিচ্ছে। কিন্তু এ কাজে পিডিবি অনেকটাই পিছিয়ে। সরকারি জমি অধিগ্রহণ করার পরও পিডিবি সেগুলোতে আইপিপি (বেসরকারি জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র) বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেই ঝুঁকছে।

সরকারি আরেক কোম্পানি ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি (ইজিসিবি) গত কয়েক বছর ধরেই কেন্দ্র নির্মাণের জন্য অর্থায়ন খুঁজছে। তাদের হাতে জমি থাকলেও আরও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ঘাটতির কারণে কেন্দ্র নির্মাণে খুব একটা এগোতে পারছে না কোম্পানিটি।

তবে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি চীনের একটি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ৫০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎ উৎপাদনে চুক্তি করেছে। এরমধ্যে তারা দুটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তিও করেছে।

সরকারের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণ নীতিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) বলছে, গ্রিডচালিত সৌরবিদ্যুতে মাত্র সাড়ে চার টাকা ইউনিটে উৎপাদন করা সম্ভব।

সরকার এজন্য নেট মিটারিং-এর মাধ্যমেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে উৎসাহ দিচ্ছে। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণে বিশদ উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মূল্য নিয়ন্ত্রণে ভারতকে অনুসরণের কথাও বলছে কেউ কেউ।

জানা গেছে, ভারতে এ ধরনের বিদ্যুৎ উৎপাদনে জমি ও গ্রিড লাইন সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়। উদ্যোক্তা শুধু প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এতে উৎপাদন খরচ অনেক কমে আসে। অন্যদিকে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার জমি তো দূরে থাক, অন্য কোনও দায়িত্ব নেয় না।

জানতে চাইলে অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, পিডিবি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এই কেন্দ্রগুলো স্থাপন করছে। অন্য কেন্দ্রগুলো অস্বচ্ছতার মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে বলেই দামের এই পার্থক্য। এদিকে এখন যে ক্রাইসিস চলছে তাতে যে ঘাটতি, তা মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ ভাগ। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ১০ ভাগ বিদ্যুৎ আনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেটি ঠিক সময়ে করা গেলে এখনকার ঘাটতি মোকাবিলা সহজ হতো।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিশেষ করে সৌরবিদ্যুতে বড় সমস্যা জমি। এরপর আছে বিশাল বিনিয়োগ। এই খাতে সবাই বিনিয়োগ করতে চায় না। একই কারণে প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও নির্দিষ্ট সময়ে তা অনেক সময় শেষ করা যায় না।