চাষির বিদ্যুৎ বিল শিল্প শ্রেণিতে!

কাজী জওহেরুল ইসলামের ছেলে রেজওয়ানুল ইসলাম কানাডা থেকে পড়াশোনা করে ঢাকায় এসেছিলেন বাবা মায়ের সঙ্গে থাকবেন। পাশাপাশি গ্রামের পুকুরে মাছ চাষের একটা উদ্যোগ নেন তিনি। প্রায় বছরখানেক ধরেই এসব বাস্তবায়নের চেষ্টা করছিলেন। এরইমধ্যে হুট করে গত ডিসেম্বরে ৪ হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল গিয়ে ঠেকে ১৭ হাজারে। কিন্তু বিল বেশি আসার কোনও ব্যাখ্যা স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দেয়নি।

রংপুরের পীরগঞ্জের খোলাহাটি গ্রামের কাজী জওহেরুল ইসলাম বলেন, তাদের কোনও রেজিস্ট্রেশন বা অন্য কিছু নেই।  বাপ-দাদার আমল থেকে বাড়ির পাশের পুকুরে মাছ চাষ করে আসছেন তারা। গ্রামে বিদ্যুৎ আসায় তিনি ভেবেছিলেন কীভাবে এই উৎপাদন বাড়ানো যায়। গত এক-দেড় বছর ধরে তার ছেলে কানাডা থেকে এসে মাছ চাষ শুরু করেন। কিন্তু এভাবে বিদ্যুতের দাম দিতে হলে মানুষ তো চাষাবাদে উৎসাহ হারাবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বাড়ির পাশে মাছ চাষ করছি। সেটি তো বাণিজ্যিক হতে পারে না।’

একই পরিস্থিতির কথা জানান ঢাকার পাশেই ছোট খামার গ্রিনারি অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী মহিউদ্দিন নিলয়। বলেন, ‘ছোট আকারে খামার করে যা আয় হয়, তা থেকে বিদ্যুৎ বিলই যদি বেশি  দিতে হয়, তাহলে মানুষ খামার করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এতে খাদ্য উৎপাদন সংকটে পড়বে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উৎপাদন বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে এ ধরনের কর্মকাণ্ড সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের লঙ্ঘন।’ নিলয় বলেন, ‘আগে আরইবি এই বিল নিতো কৃষি শ্রেণিতে। এখন হুট করে তারা বলছে—শিল্প শ্রেণিতে বিল দিতে হবে।’

এ ধরনের বিল আদায়কে সরাসরি অবৈধ বলছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেশন কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল। তিনি ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলমের কাছ থেকে বিষয়টি শুনে বিস্মিত হয়ে রবিবারের (৮ জানুয়ারি) শুনানিতে আরইবির সদস্য (অর্থ) দীপংকর বিশ্বাসের কাছে বিষয়টির সত্যতা জানতে চান। দীপংকর বিশ্বাস কমিশনের চেয়ারম্যানকে জানান, অর্থ মন্ত্রণালয় তাদের মৎস্য চাষ এবং পশু পালনকে শিল্প শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। জবাবে চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল। বলেন, ‘এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কিনা। আর আরইবি তাদের কথা শুনে কেন শ্রেণি পরিবর্তন করবে। যখন মানুষ কৃষিকাজ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখন কেন এটি করা হলো?’ আরইবির সদস্য (অর্থ) এর কোনও জবাব দিতে পারেননি। তখন চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারা অর্থ বিভাগের কাছে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি লিখবেন। তারা তো নিজেরাই প্রজ্ঞাপন করে এসব বাতিল করতে পারেন। যার যেমন সুবিধা, এভাবে চলতে পারে না।’

বিশ্বে বাংলাদেশ মিষ্টি পানির মাছ চাষে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। দেশের সবখানে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় আধুনিক কলাকৌশল রপ্ত করে মাছ চাষ করছেন চাষিরা। কিন্তু এখন বিদ্যুতের বিল বাড়ালে তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হবে, বলেন কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল।

প্রসঙ্গত, রবিবার (৮ জানুয়ারি) রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনের শহীদ এ কে এম শামসুল হক খান অডিটরিয়ামে বিদ্যুতের দাম পুনর্নির্ধারণে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানির একপর্যায়ে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম আরইবির কাছে জানতে চান, পশুপালন ও মৎস্য চাষ কি কৃষিকাজ? এসব কাজে ব্যবহৃত বিদ্যুতের মূল্যহার কত? এ সময় কমিশনের চেয়ারম্যানও এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরইবির পক্ষে দীপংকর বিশ্বাস বিষয়টি ওপরে উল্লিখিত তথ্য তুলে ধরেন।