উৎপাদন না বাড়লে আবাসিকে গ্যাস নয়

জুন মাসে ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানি

আগামী জুন মাসে ভারত থেকে পরীক্ষামূলক পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানি শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সোমবার (১৬ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে তিনি এ আশা প্রকাশ করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।

সরকারি দলের এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানির জন্য ভারত অংশে ৫ কিলোমিটারসহ প্রায় ১৩১ দশমিক ৫ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানির প্রি-কমিশনিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগামী জুন মাসে ওই পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানির কমিশনিং তথা পরীক্ষামূলক ডিজেল আমদানি শুরু হবে বলে আশা করা যায়।

নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে (জুন ২০২২) দেশে মজুত গ্যাসের পরিমাণ ৯ দশমিক শূন্য ৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। মজুত গ্যাস দিয়ে প্রায় ১১ বছর দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব।

নসরুল হামিদ বলেন, সর্বশেষ (১ জুলাই, ২০২২) প্রাক্কলন অনুযায়ী দেশে মোট উত্তোলনযোগ্য প্রমাণিত ও সম্ভাব্য মজুত ২৮ দশমিক ৫৯ টিসিএফ। গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ক্রমপুঞ্জিত গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ১৯ দশমিক ৫৩ টিসিএফ। সে হিসাবে উত্তোলনযোগ্য অবশিষ্ট মজুতের পরিমাণ ৯ দশমিক শূন্য ৬ টিসিএফ। গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে দৈনিক গড়ে প্রায় ২২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে বিবেচনায় অবশিষ্ট মজুতকৃত গ্যাস দ্বারা প্রায় ১১ বছর বাংলাদেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

আগামী গ্রীষ্মকাল ও রমজান মাসে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ অতীতের অভিজ্ঞতায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে সরকারি দলের শফিউল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, এ বছর রমজান মাস, গ্রীষ্মকাল ও সেচ মৌসুম একই সময়ে হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা অত্যধিক বৃদ্ধি পাবে। বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের কারণে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ খাতকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বিদ্যমান বাস্তবতায় সরকার সব গ্রাহককে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, বর্তমানে দেশে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা তিন কোটি ৪৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৭৫ জন।

উৎপাদন না বাড়লে আবাসিকে গ্যাস নয়

মোহাম্মদ হাবিব হাসানের প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে শিল্প, বিদ্যুৎ ও সার কারখানাকে গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করা অর্থনৈতিক গতিশীলতার স্বার্থে একান্ত অপরিহার্য বিবেচিত হয়। পক্ষান্তরে গৃহস্থালি তথা আবাসিক শ্রেণিতে গ্যাসের সংযোগ প্রদান করা অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে এলপিজির সহজলভ্যতা এবং ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় গৃহস্থালি পর্যায়ে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদান পরিপত্রের মাধ্যমে বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ পর্যাপ্ত বৃদ্ধি না পেলে এবং শিল্প, বিদ্যুৎ ও সার কারখানায় গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা হ্রাস না পেলে আবাসিক গ্যাস সংযোগ উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে না।

সৈয়দ আবু হোসেনের প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে এলপিজি গ্যাসের চাহিদা প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন। এরমধ্যে সরকারি পর্যায়ে ২ শতাংশ পূরণ হয়। অবশিষ্ট চাহিদা বেসরকারি পর্যায়ে পূরণ হয়ে থাকে।

কয়লার মজুত সাত হাজার ৮২৩ ট্রিলিয়ন মেট্রিক টন

এ কে এম রহমতুল্লাহর প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী জানান, এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ৫টি কয়লা খনির সম্ভাব্য মজুতের পরিমাণ সাত হাজার ৮২৩ ট্রিলিয়ন মেট্রিক টন।

বেনজীর আহমেদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা/কোম্পানি দুই হাজার ৫৯৪ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ লাইন নির্মাণ সম্পন্ন করেছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ডিপিডিসি ও ডেসকোর আওতাধীন এলাকায় যথাক্রমে ৫০ কিলোমিটার, এক হাজার ১৪৫ দশমিক ৫৭ কিমি. ও এক হাজার ৩৯৯ দশমিক ২৯ কিমি. ভূগর্ভস্থ বিতরণ লাইন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ডিপিডিসি ও ডেসকো এলাকায় যথাক্রমে ৯২৫ দশমিক ৫০ কিমি. ও ১৮০ কিমি. ভূগর্ভস্থ বিতরণ লাইন স্থাপন করা হবে।