আদানির কাছে কম দামে কয়লা পাওয়ার আশা পিডিবির  

আদানির কাছ থেকে কম দামে কয়লা পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে অতিরিক্ত কয়লার দাম নিয়ে সমালোচনার মাঝে সরকার কোম্পানিটিকে চিঠি দিয়েছে। সরকার আশা করছে, আদানি পিডিবির সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছাবে।

পিডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, আমরা তাদের বলেছি— আমাদের দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার দাম কত পড়ছে। একইসঙ্গে এ কারণে আমাদের দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট প্রতি উৎপাদন ব্যয়ও তাদের জানানো হয়েছে। এখন আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির অধীনে কয়লা আমদানির মূল্য কমাতে আলোচনার জন্য আদানি পাওয়ার লিমিটেডকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ।

গত ২ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ  প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ রয়টার্সকে জানান, এখন যেহেতু আমরা অন্যান্য কয়লা প্ল্যান্টের দামে ছাড় পাচ্ছি, যেমন পায়রা পাওয়ার প্ল্যান্ট। আমরা আদানির সঙ্গে আলোচনার জন্য দরজা খুলতে চাই। তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার জন্য তাদের একটি চিঠি পাঠিয়েছি।’

২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর বিদ্যুৎ বিভাগ ও আদানি পাওয়ারের মধ্যে একটি ক্রয় চুক্তি হয়। চুক্তির আওতায় আদানি ভারতের ঝাড়খণ্ডে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আগামী মার্চ-নাগাদ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ পাবে বলে রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রতিমন্ত্রী  জানান।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আদানির বিদ্যুৎ নিয়ে যেসব কথা হচ্ছে, তার কোনও ভিত্তি নেই। আমরা প্রতিযোগিতামূলক বাজার দরেই বিদ্যুৎ পাবো। এ নিয়ে কোনও সংশয়ের সুযোগ নেই। মার্চে প্রথম ইউনিট থেকে আসবে ৭৫০ মেগাওয়াট। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে আরও ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে এপ্রিল মাসে।’

এদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন দিয়েছে, ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—  আদানি পাওয়ার কোম্পানি ৪৬০০ কিলোক্যালরি/কেজি ক্ষমতার প্রতি টন কয়লার দাম নিচ্ছে ৩৪৭ ডলার। বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানির (বিসিপিসিএল) পায়রা কেন্দ্রের কয়লার দাম পড়ছে ২৪৫ ডলার প্রতিটন। বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানির কয়লার দাম ২৫৪ ডলার। এস আলম গ্রুপের এএস পাওয়ারের চট্টগ্রাম কেন্দ্রের কয়লার দাম পড়ছে ২৭০ ডলার এবং বরিশাল ইলেক্ট্রিক পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের বরগুনা তালতলির কেন্দ্রটির কয়লার দাম পড়ছে ২৬০ ডলার।

সেই হিসাবে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার দাম ১০২ ডলার বেশি। অর্থাৎ প্রতি টন কয়লায় আদানিকে বেশি দিতে হবে ১০ হাজার ৭০০ টাকা। এক মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য ২৪ ঘণ্টায় ১০ টন কয়লার প্রয়োজন হয়। সেই হিসাবে ১৬০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি ফুল লোডে চালাতে হলে দৈনিক ১৬ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন। সেই হিসাবে আদানিকে দৈনিক পরিশোধ করতে হবে ১৬ কোটি টাকা।

পাওয়ার সেলের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা পরিস্থিতিটা সরকারকে বোঝাতে চেষ্টা করেছি। সরকার সেটি বুঝে ব্যবস্থা নিচ্ছে। আশা করছি, শিগগিরই আদানির সঙ্গে বৈঠকের পর এ বিষয়ে একটি সমঝোতা হবে।

উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালের জুনে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফর করেন। তখন ভারতের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই হয়। এই চুক্তির ধারাবাহিকতায় আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

কয়েকটি জায়গা থেকে আদানির সঙ্গে চলতি সপ্তাহে পিডিবি বা মন্ত্রণালয়ের সভা আছে বলে শোনা গেলেও পিডিবি সূত্র বলছে, এখনও আদানির সঙ্গে বৈঠকের কোনও দিন-তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।