অধিগ্রহণ করা জমি সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা

কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রর জন্য অধিগ্রহণ করে রাখা জমি সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ী ও বাগেরহাটের রামপালে ইতোমধ্যে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অধিগ্রহণ করে রাখা জমি সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) একাধিক সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছে।

সরকার সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। এজন্য সব চাইতে বড় সমস্যা জমির সংস্থান করা। কিন্তু সরকারের হাতেই অধিগ্রহণ করা কয়েক হাজার একর জমি রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা যায়।

কক্সবাজারের মহেশখালীতে পিডিবি ও সিঙ্গাপুর যৌথ উদ্যোগে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা নেয়। একই এলাকায় পিডিবি নিজেও ১৩২০ মেগাওয়াটের আরও একটি কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এছাড়া পিডিবি ও টিএনবি মালয়েশিয়া যৌথ উদ্যোগে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট; পিডিবি, সিএইডিএইচকে ও চীনের যৌথ উদ্যোগে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়া; বিপিডিবি ও কেপকো, কোরিয়া জয়েন্ট ভেঞ্চারে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কথা ছিল। পিডিবি সবগুলো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ মূলধনী কোম্পানিও গঠন করেছিল। এজন্য মহেশখালীতে ৮  হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু ওই জমি এখন পড়ে রয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ইতোমধ্যে বলেছেন, সরকার কয়লাচালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করায় ১০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চলে গেছে। সরকার জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করছে।

৮ হাজার একর জমির মধ্যে এলএনজি টার্মিনাল এবং মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়া বাকি জমি পড়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে এখানে ৬ হাজার একর জমি সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পাওয়া যাবে। সরকার চাইলে এখানে অন্তত ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে পারবে। তবে বিষয়টি কতটা কারিগরিভাবে যথাপোযুক্ত সেই বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ একবারে একটি জায়গা থেকে এত বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের উৎপাদন কমে গেলে তা গ্রিডের ওপর কী প্রভাব ফেলবে সে বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।

এছাড়া পটুয়াখারীর পায়রায় দুটি ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু শেষে সুন্দরবনের কথা চিন্তা করে সরকার দ্বিতীয় প্রকল্প থেকে সরে আসে। এতে করে সেই জায়গাটিও ফাঁকা পড়ে রয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, জমি অধিগ্রহণ করাই রয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার বিষয়টি চিন্তা করছে কীভাবে এই জমি ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়নি। সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি এই প্রকল্পগুলো নির্মাণ করবে নাকি পিডিবি আগে যাদের সঙ্গে যৌথমূলধনী কোম্পানি করেছে তারাই প্রকল্প নির্মাণ করবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেই বিপুল পরিমাণ জমি ব্যবহার করা হবে।

ইতোমধ্যে সৌদি আরব এবং চীনের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেশে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। সরকারের কাছে তারা প্রকল্প নির্মাণের চন্য জমিও চেয়েছে।