ঢাকার বিভিন্ন এলাকার পেট্রোল পাম্পে অকটেনের সংকট দেখা গেছে আজ রবিবার (২৯ জুন)। বেশ কয়েকটা পাম্প ঘুরেও অকটেন পাননি অনেকে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন অকটেনচালিত গাড়িচালকরা। এদিকে জ্বালানি তেল মজুত করে কৃত্রিম মূল্য বৃদ্ধির কোনও সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।
সংস্থাটি জানায়, ১ জুলাই বন্দরে ভিড়তে যাচ্ছে তেলবাহী জাহাজ। দেশে এখন যে জ্বালানি তেল রয়েছে, তাতে অন্তত আরও পাঁচ দিনের বেশি সময় চলবে। ফলে কোনোরকম সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা নেই।
সূত্র বলছে, সরকার মাসের শেষ তারিখে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করে থাকে। কিন্তু ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে দেশে জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ আসতে দেরি হচ্ছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়াতে কেউ কেউ কৃত্রিম মজুত করছে। তারা ধারণা করছেন, যেহেতু দেশে জ্বালানি তেল আসতে দেরি হচ্ছে, তাই দাম বাড়তে পারে। তবে এ ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি হতে পারে এমন ধারণা থেকে সরকার আজ সন্ধ্যায় জ্বালানি তেলের মূল্য অপরিবর্তিত রেখে জুলাইয়ের দাম নির্ধারণ করে। অর্থাৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে না বিষয়টি সরকারের তরফ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
জ্বালানি তেল যেহেতু সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করা হয়ে থাকে, সঙ্গত কারণে চাইলেও বেশি দাম নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। অন্যদিকে একটি পক্ষ খবর ছড়িয়েছে, যুদ্ধের জন্য দেশে জ্বালানি তেল, বিশেষ করে অকটেন আনা সম্ভব হচ্ছে না। এতে কোনও কোনও পেট্রোল পাম্প অকটেন বিক্রি বন্ধ রেখেছে। তারাও মূলত বাড়তি দাম পাওয়ার আশায় কৃত্রিমভবে এই সংকট সৃষ্টি করেছেন বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও বিপিসি বলছে, তারা বিষয়টি জানার পর নজরদারি বাড়িয়েছে।
তবে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার পেট্রোল পাম্পে অকটেনের সংকট দেখা গেছে। রাজধানীর কয়েকটি পাম্প ঘুরে দেখা যায় অকটেন নেই। গ্রাহকরা এসে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকেই রাগ-ক্ষোভও দেখাচ্ছেন।
মিরপুরের বাসিন্দা আনিক ইসলাম রাইড শেয়ার করেন। তিনি জানান, আজকে তিন পাম্প ঘুরে তেল পাইনি। বিকালের পরে আর চালাতে পারবো না। এভাবে হুট করে তেল বন্ধ করে দেওয়ার কী মানে? আগে জানালেও তো পারে।
মোটরসাইকেলে অফিসে যান আরিফ হোসেন নামে এক চাকরিজীবী। তিনি বলেন, আজকে এক বন্ধুর মুখে শুনলাম অকটেন পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আর মোটরসাইকেল নিয়ে বের হই নাই। বাসে করেই অফিসে গেলাম। নিজের বাহন বাদ দিয়ে অন্য কিছুতে যাওয়াটা খুবই ভোগান্তির। পাশাপাশি খরচও বেড়ে যায়।
পাম্পে অকটেন পাওয়া যাচ্ছে না কেন জানতে চাইলে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক-লরি মালিক ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান রতন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আজ সরকার জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করবে। এই খবরে কিছু কিছু জায়গায় তেল মজুত করা হয়েছে বলে আমরা শুনেছি। এ কারণে অনেক পাম্পে অকটেন পাওয়া যাচ্ছে না। তবে অন্য জ্বালানি তেলের কোনও সমস্যা নেই। কাল থেকে এই সংকট থাকবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পরিচালক (অপারেশন ও বিপণন) ড. এ কে এম আজাদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের সব সময় সাধারণত ১০ দিনের তেল মজুত থাকে। যুদ্ধের কারণে কার্গো আসতে দেরি হওয়ায় পাঁচ দিনের মজুত আছে। ১ জুলাই রাতের মধ্যে একটি কার্গো দেশে আসবে। এটি লোড হতে দুই তিন দিন সময় লাগতে পারে। তবে সংকট হওয়ার কথা নয় এখন। কারণ ডিপোগুলোতে যথেষ্ট মজুত আছে।
তিনি বলেন, দাম বাড়াতে পারে, এই ইস্যুতে কেউ কেউ তেল মজুত করেছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। এই বিষয়ে আমরা কাজ করছি। আর প্রতি মাসে যে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়, তা হয় সাধারণত মাস শেষে। এবার সেটি আজ সন্ধ্যাই হয়ে গেছে। দাম অপরিবর্তিত থাকছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। সুতরাং কাল থেকে আর সমস্যা থাকবে না বলে আশা করছি।
প্রসঙ্গত, আজ বিকালে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, জুলাই মাসের জন্য জ্বালানি তেলের দাম অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।